পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কাজ, কিন্তু তোমাকে অবহেলা করে সে আর সকলকে পোলাও-কালিয়া খাওয়াতে পারত না মা, ভাতে-ভাত সবাইকে গিলতে হতো। কিন্তু আর কেন তাকে টানাটানি করা ? আমরা যা চেয়েছিলুম সে আশা ঘুচেচে—আর সে ফিরবে না মা। এই বলিয়া সতী দ্রুত প্রস্থান করিল । দারুণ বিস্ময়ে উভয়েই হতবুদ্ধি হইয়া গেলেন। সতীর স্বভাবে এরূপ উক্তি, এরূপ আচরণ এমনি স্তষ্টেছাড়া যে ভাবাই যায় না সে প্রকৃতিস্থ আছে। বিপ্রদাস জিজ্ঞাসা করিল, কি ব্যাপার মা ? দয়াময়ী কহিলেন, জানিনে ত বাবা । কিসের জন্যে বন্দনাকে তোমরা চেয়েছিলে মা ? কিসের আশা ঘুচলে ? দয়াময়ী মনে মনে লজ্জায় মরিয়া গেলেন, কিছুতে মুখে আনিতে পারিলেন না কি তার সঙ্কল্প ছিল। শুধু বলিলেন, সে-সব কথা আর একদিন হবে বিপিন, আজ না! মা, অক্ষয়বাবুর মেয়ের সম্বন্ধে কি কিছু স্থির করলে ? তাদের ত একটা জবাব দেওয়া চাই । আমার আপত্তি নেই বিপিন, তোদের মত হলেই হবে । দ্বিজুকেও জিজ্ঞাসা করিস সে কি বলে। এই বলিয়া তিনিও ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। বিপ্রদাস সংশয়ে পড়িল । স্পষ্ট বিশেষ হইল না, কিন্তু স্পষ্ট করিয়া লইবারও সময় আর ছিল না। বিপ্রদাস কলিকাতায় আসিয়া দেখিল বাড়ি খালি । বন্দন ও তাহার পিতা ঘণ্ট-কয়েক পূৰ্ব্বে চলিয়া গেছেন। এ সংশয় যে তাহার একেবারে ছিল না তা নয়, কিন্তু এতটাও আশঙ্কা করে নাই। অন্নদা কারণ জানে না, শুধু এইটুকু জানে যে যাবার ইচ্ছা রায়সাহেবের তেমন ছিল না, কেবল কন্যাই জিদ করিয়া পিতাকে টানিয়া লইয়া গেছে। বন্দনার পরে দাবী কিছুই নাই, থাকার দায়িত্বও তাহার নয়, এখানে সে অতিথি মাত্র, তবু সে যে দেখা না করিয়া পীড়িত দ্বিজদাসকে অচেতন ফেলিয়। রাখিয়া অকারণ ব্যস্ততায় চলিয়া গেছে মনে করিতে তাহার ক্লেশ বোধ হইল। অনেকটা রাগের মতো—নিৰ্দ্দয়, নিষ্ঠুর বলিয়া যেন শাস্তি দিতে ইচ্ছা করে । কিন্তু প্রকাশ করা তাহার প্রকৃতি নয়, সে-ভাব তাহার মনের মধ্যেই রহিয়া গেল । দিন-চারেক পরে বিপ্রদাস হাইকোর্ট হইতে ফিরিল প্রবল জর লইয়া । হয়ত ম্যালেরিয়া, হয়ত বা আর কিছু। চোখ রাঙা, মাথার যন্ত্রণ। অত্যন্ত বেশি, অন্নদা কাছে আসিলে বলিল, অনুদি, অমুখ ত কথন হয় না, বহুকাল জরামুর দৈত্যটাকে ফাকি দিয়ে এসেচি, এবার বুঝিবা সে স্বদে-আসলে উমুল করে। মনে হচ্চে কিছু ভোগাবে, সহজে নিষ্কৃতি দেবে না । tr8