পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস আজও তাহার ঘনিষ্ঠ পরিচয় নাই। সামান্য পরিচয় যেটুকু সে শুধু খবরের কাগজ, মাসিকপত্র ও সাধারণ সাহিত্যের গল্প-উপন্যাসের সহযোগে । কলিকাতায় সৰ্ব্বদা আনাগোনা যাহাদের, তাহদের মুখে মুখে অনেক তথ্য মাঝে মাঝে তাহার কানে আসে—অ্যানিটা চ্যাটার্জি এম. এ. বিনীতা ব্যানার্জি বি. এ. অনস্বয়া, চিত্ৰলেখা, প্রিয়ম্বদা প্রভৃতি বহু জমকালো নাম ও চমকানো কাহিনী—বিংশ শতাদের অত্যাধুনিক মনোভাব ও রোমাঞ্চকর জীবন-যাত্রার বিবরণ–কিন্তু ইহার কতটা যে যথার্থ ও কতটা বানানো দূর হইতে নি:সংশয়ে অনুমান করা ছিল তাহার পক্ষে কঠিন। তাই আপন সমাজের কোন চিত্রটা ছিল তাহার মনের মধ্যে অতিরঞ্জিত ঘোরালো, কোনটা বা ছিল অস্বাভাবিক রকমের ফিক, এই ছবিগুলিই প্রত্যক্ষ পরিচয়ে স্পষ্ট ও সত্য করিয়া লইবার মুযোগ মাসীমার মেয়ে প্রকৃতির বিবাহ-উপলক্ষে যখন মিলিল তখন বন্দনা উপেক্ষা করিতে পারিল না, সহজেই সম্মত হইয়া তাহার বালিগঞ্জের গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইল। আপন দলের বহুজনের সঙ্গে তাহাদের জানা-শুনা, বিশেষত: প্রকৃতি এখানকার স্কুল-কলেজে পড়িয়াই বি. এ. পাশ করিয়াছে, তাহার নিজের বন্ধু-বান্ধবীর সংখ্যাও নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর নয়। আসিয়া পৰ্য্যন্ত এই দলের মাঝখানেই বন্দনার এই কয়দিন কাটিল । পিতা অনাথ রায় বোম্বায়ে ফিরিয়া গেলেন, কিন্তু সুধীর রহিল কলিকাতায় আসন্ন বিবাহের আনন্দোৎসব নিত্যই চলিয়াছে, সেদিন বেলঘরের একটা বাগানে পিকনিক সারিয়া সদলবলে বাড়ি ফিরবার পথেই সে দ্বিজদাসের সংবাদ লইতে এ-বাড়িতে আসিয়া হাজির হইয়াছিল। এই খবরটাই অন্নদা সেদিন বিপ্রদাসকে দিয়াছিল। মাসীর বাড়িতে দলের লোকের আসা-যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, সলা-পরামর্শের কামাই নাই, আজও ছিল অনেকের চায়ের নিয়ন্ত্রণ । অতিথিগণ আসিয়া পৌঁছিয়াছেন, উপরের ঘরে মহাসমারোহে চলিয়াছে চা-খাওয়া ! এমন সময়ে বিপ্রদাসের প্রকাও মোটর আসিয়া গেটের মধ্যে প্রবেশ করিল। ভূত্যের দল অবহিত হইয়া উঠিল, কিন্তু শোফার দরজা খুলিয়া দিতে যে প্রৌঢ় স্ত্রীলোকটি অবতরণ করিল তাহার পোষাকের সামান্ততায় ও স্বল্পতায় সকলে বিস্মিত ও বিব্রত হইয়া পড়িল । মোটরের সঙ্গে মানুষের সামঞ্জস্ত নাই । অন্নদার পরণে ছিল সাদা থান, তেমনি একটা শাদা মোট চাদর গায়ে জড়ানো, পা খালি, হাত খালি, মাথায় অণচলট কপালের অৰ্দ্ধেকটা চাপা দিয়াছে—সে নিজেও যেন সলজ্জ সঙ্কোচে কিছু জড়-সড়ো । ভৃত্যু-বেহারাদের চাপকান-পাগড়ীর সাজ-সজ্জায় বুঝা কঠিন কে কোন দেশের, তথাপি সম্মুখের লোকটাকে বাঙালী আন্দাজ করিয়া অন্নদা জিজ্ঞাসা করিল, বন্দনা দিদি আছেন ? সে বাঙালীই বটে, কহিল, ই আছেন। তারা উপরে চা খাচ্চেন, আপনি ভেতরে এলে বক্ষন । ♥ግ