পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এবং একদৃষ্টি ছেলেদের আহাৰ্য্যের প্রতি চাহিয়া রহিল। অত্যন্ত মোট চালের অন্ন । জলের মত কি একটা দাল, শাক, ডাটা এবং কচু দিয়া একটা তরকারি এবং তাহারই পাশে দুটুকরা পোড় কুমড়া ভাজ। দধি নাই, দুগ্ধ নাই, কোনপ্রকার মিষ্ট নাই ; এক টুকরা মাছ পৰ্য্যস্ত কাহারও পাতে পড়িল না। সকলের সঙ্গে মহিম অম্লান মুখে নিরতিশয় পরিতৃপ্তির সহিত এইগুলি ভোজন করিতে লাগিল ; কিন্তু চাহিয়া চাহিয়া মুরেশের দুই চক্ষু জলে ভরিয়া উঠিল । সে কোনমতে মুখ ফিরাইয়া অশ্ব মুছিয়া উঠিয়া দাড়াইল । সামান্য কারণেই সুরেশের চোখে জল আসিয়া পড়িত । আহারান্তে মহিম তাহার ক্ষুদ্র শয্যার উপর আনিয়া বন্ধুকে যখন বসাইল, তখন সুরেশ রুদ্ধস্বরে কহিল, বার বরি তোমার অত্যাচার সহ করতে পারি না মহিম | মহিম নিরীহভাবে জিজ্ঞাসা করিল, তার মানে ? মুরেশ কহিল, তার মানে—এমন কদৰ্য্য বাড়ি যে সহরের মধ্যে থাকতে পারে, এমন ভয়ানক বিশ্ৰী খাওয়াও যে কোন মানুষ মুখে দিতে পারে, চোখে না দেখলে আমি কোনমতে বিশ্বাস করতে পারতুম না । তা যাই হোক, এ জায়গার তুমি সন্ধান পেলেই বা কিরূপে, আর তোমার সাবেক বস!—ত সে যত মন্দই হোক, এর সঙ্গে তুলনাই হয় ন—তাই বা পরিত্যাগ করলে কেন ? বন্ধু-স্নেহ বন্ধুর বুকে আঘাত করল । মঙ্গম আর তােহর নিৰ্ব্বিকার গাষ্ঠীৰ্ঘ্য বজায় রাখতে পারল না, আদ্র স্বরে কইল, সুরেশ, তুমি আমার গ্রামের বাড়ি দেখ নি ; তা হলে বুঝতে এ-বাসায় আমার কিছুমাত্র ক্লেশ হ’তে পারে না । আর খাওয়া—আর পাঁচজন ভদ্রসস্তান যা স্বচ্ছন্দে থেতে পারে, অামি পারব না কেন ? মুরেশ উত্তেজিত হইয়া বলিল, এ কেনর কথা নয় । ভালমন্দ জিনিস সংসারে অবশুই আছে। ভাল ভালই লাগে, মন্দ যে মন্দ লাগে, তাতে আর সংশয় নেই । আমি শুধু জানতে চাই, তোমার এত দুঃখ করবার প্রয়োজন কি হয়েচে ? মহিম চুপ করিয়া মৃদু মুছ হাসিতে লাগিল—কথা কহিল না। সুরেশ কহিল, তোমার প্রয়োজন তোমার থাক, আমি জানতে চাই না । কিন্তু আমার প্রয়োজন তোমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া । আমি গাড়ি ডেকে তোমার জিনিস-পত্র এখনই আমাদের বাড়ি নিয়ে যাব । এখানে তোমাকে ফেলে রেখে যদি যাই, চোখে আমার ঘুম আসবে না, মুখে অন্ন রুচবে না । তোমাদের বাসার চাকরকে ডাক, একটা গাড়ি নিয়ে আম্বক। এই বলিয়া সুরেশ মহিমকে টানিয়া তুলিয়া স্বহস্তে তাহার বিছানা গুটাইতে প্রবৃত্ত হইল । মহিম বাধা দিয়া টানা-হেঁচড়া বাধাইয়া দিল না । কিন্তু শান্ত গম্ভীরস্বরে বলিল, পাগলামি ক’রো না সুরেশ ।