পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য সংগ্ৰহ দাড়াইয়া পাংশু-মুখে কান পাতিয়া প্রত্যেক কথাটি গিলিতেছে। শুষ্ক উপহাসের ভঙ্গিতে কহিল, তোমার বাবার হ’ল কি, বলতে পারো ? অচলা চমকিয়া মুখ ফিরাইয়া বলিল, না । স্বরেশ কহিল, আমি নিশ্চয়ই বলতে পারি, উনি বিশ্বাস করেননি। ওঁর ধারণা, আগুন লাগার গল্পটা আমাদের আগাগোড়া বানানো। একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, সত্যি-মিথ্যে একদিন টের পাবেনই, ওঁর সন্দেহটা এমন যে, এখানে আসা আমার পক্ষে একেবারে অসম্ভব হয়ে উঠেচে । অচলা শুষ্ক-মুখে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি আর আসবেন না ? সুরেশ উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল, বোধ করি সম্ভব নয়। আমারও ত কিছু আত্মসম্মানবোধ আছে। কোন লোককে দিয়ে আমার ব্যাগটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে । অচলা ঘাড় নাড়িয়া বলিল, আচ্ছা ! কিন্তু তাহার এখানে আসা না-আসার সম্বন্ধে কোন কথা কহিল না। তা হলে কাল সকালেই দিয়ে । অনেক দরকারী জিনিস আমার ওর মধ্যে আছে, বলিয়াসে কেদারবাবুর জন্ত অপেক্ষ না করিয়াই বাহির হইয়া গেল । কেদারবাবু ফিরিয়া আসিয়া কিছু আশ্চৰ্য্য হইলেন বটে, কিন্তু মনে মনে যে অপ্রসন্ন হইয়াছেন, তাহা বোধ হইল না । রাত্রে বহুক্ষণ পৰ্য্যন্ত শয্যার উপর ছট্‌ফট্‌ করিয়া অচলা উঠিয়া পড়িল । তাহার ইচ্ছ, বাইরে বারান্দায় দাড়াইয়া সম্মুখের রাজপথের উপর লোকচলাচলের প্রতি চাহিয়া কিছুক্ষণের জন্যেও অন্যমনস্ক হয় । তাহার ঘরের ও-দিকের কবাট খুলিয়া সে বারান্দায় আসিয়া দেখিল, তখনও বসিবার ঘরে আলো জলিতেছে । প্রথমে মনে করিল, চাকরেরা গ্যাস বন্ধ করিতে ভুলিয়া গিয়াছে ; কিও কয়েকপদ অগ্রসর হইতেই ভিতর হইতেই তাহার পিতার কণ্ঠস্বর কানে আসিতে তাহার বিস্ময়ের পরিসীমা রহিল না। চিরদিন তিনি দশটা বাজিতে না বাজিতেই শয্যা গ্রহণ করেন ; কিন্তু আজ সাড়ে দশটা বাজিয়া গিয়াছে। পরক্ষণেই দাসীর গলা শুনা গেল। সে বলিতেছে, এখন সোয়ামী মারা গেছে—আর যে মৃণাল-দিদিমণি শ্বশুর-ধর করে, এমন ত আমার মনে হয় না বাৰু। জামাইবাবুর সঙ্গে কি যে দাদা-নাতনি মুবাদ, তা তেনাই জানে । প্ৰতুত্তরে কেদারবাবু শুধু ই বলিয়াই চুপ করিয়া রছিলেন। অচলা বুঝিল, ইতিপূৰ্ব্বে অনেক কথাই হইয়া গিয়াছে। মৃণালের সম্বন্ধে, মহিমের সম্বন্ধে, তাহার সম্বন্ধে—কিছুই বাদ যায় নাই। কিন্তু পাছে নিজের সম্বন্ধে নিরতিশয় ጏቅ •