পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२ কেদারবাবু সংসারে সাধারণ দশজনের মত দোষে-গুণে মানুষ । মেয়ের বিবাহে জামাই যাহতে পাল-করা হয়, অবস্থাপন্ন হয়, এই কামনাই করিয়াছিলেন। মহিম ভাল ছেলে, সে এম. এ. পাস করিয়াছে, দেশে তাহার অল্পবস্ত্রের সংস্থান আছে, অতএব তাহার হাতে কন্যা সম্প্রদান করিতে তিনি সৌভাগ্য বলিয়াই গণ্য করিয়াছিলেন। কিন্তু অকস্মাৎ তাহার ধনাঢ্য বন্ধু স্বরেশ যখন একদিন তাহার গাড়ি করিয়া জাসিয়া একটা উট রকমের খবর দিয়া নিজেই জামাইগিরির উমেদার খাড়া হইল, তখন উভয় বন্ধুর মধ্যে আর্থিক সঙ্গতির হিসাব করিয়া মহিমকে বরখাস্ত করিতে কোরবাবুর মনের মধ্যে কোন আপত্তিই উঠিল না। তিনি ভালবাসার যুগ্ম-তত্বের বড় একটা ধার ধারতেন না। র্তাহার বিশ্বাস ছিল, মেয়েমানুষে যাহার কাছে গাড়ি পান্ধী চড়িয়া বসুীলঙ্কার পরিয়া মুখে-স্বচ্ছন্দে থাকিতে পায়, স্বামী হিসাবে তাহাকেই সকলের শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য করে । সুতরাং মেয়েকে স্বর্থী করাই যদি পিতার কর্তব্য হয় ত এত বড় অযাচিত সুযোগ কোনমতেই যে হাত-ছাড়া করা উচিত নয়, ইহা স্থির করিতে র্তাহাকে অত্যন্ত বেশি চিন্তা করিতে হয় নাই । এমন কি বড়লোক জামাতার কাছে কর্জ করিয়া বিবাহের পূর্বেই হাজার-পাঁচেক টাকা লওয়াও তিনি দোষের মনে করেন নাই ; এবং বাড়িটা যখন তাহার থাকিবে, তখন পরিশোধের দুশ্চিন্তাও তাঁহাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলে নাই। অথচ হতভাগা মেয়েটা সমস্ত পণ্ড করিয়া দিল—কিছুতেই বাগ মানিল না । অতএব শেষ পৰ্য্যন্ত সেই মহিমের হাতেই তাহাকে মেয়ে দিতে হইল বটে, কিন্তু এই দুর্ঘটনায় তাহার ক্ষোভের অবধি রহিল না ! তা ছাড়া, যে কথাটা এখন উহাকে নিজের কাছে নিজে স্বীকার করিতে হইল তাহা এই যে টাকাটা এইবার ফিরাইয়া দেওয়া প্রয়োজন । কিন্তু জিনিসটা লেখাপড়ার মধ্যে না থাকায় এবং পরিশোধের রাস্তাটাও খুব সম্পষ্ট ও প্রাঞ্জল হইয়া চোখে না পড়ায়, ইহার চিন্তাটাকেও তিনি হৃদয়ের মধ্যেও তেমনি উজ্জল করিয়া তুলিতে পারিলেন না। স্বতরাং, প্রশ্নটা যদিচ মনের মধ্যে উঠিল বটে, কিন্তু উত্তরটা তেমনি ঝাপসা হইয়া রহিল। অচলা শ্বশুরবাড়ি চলিয়া গেল। ইহার পরে স্বরেশের আসা-যাওয়া, ঘনিষ্ঠত কেদারবাবু পছন্দ করিতেন না। বাট নাই অজুহাতে অধিকাংশ সময় দেখাও দিতেন না। কিন্তু তাহাকে ভালবাসিতেন বলিয়া মেয়ের দুর্ব্যবহারে বৃদ্ধ অস্তরের মধ্যে লজিত এবং দুঃখিত হইয়া রছিলেন । ¥दै ९