বিন্দুর ছেলে
বলিল, আমি সব কাজ পাগলের মত করি, না। বলিয়া উঠিয়া গিয়া অমূল্যকে তুলিয়া আনিয়া পাখার বাটের বাড়ি ঘা-কতক দিয়া দামী মখমলের পোষাক টানিয়া টানিয়া খুলিয়া ফেলিতে লাগিল ।
মাধব ভয়ে ভয়ে বাহির হইয়া গিয়া অন্নপূর্ণাকে সংবাদ দিলেন, মাথায় ভূত চেপেচে বৌঠান, একবার যাও ।
অন্নপূর্ণ ঘরে ঢুকিয়া দেখিলেন, বিন্দু সমস্ত পোষাক লইয়। একটা সাধারণ বস্ত্র পরাইয়া দিতেছে, অমূল্য ভয়ে বিবর্ণ হইয়া দাড়াইয়া আছে।
অন্নপূর্ণ বলিলেন, বেশ ত হয়েছিল ছোটবেী, খুললি কেন ? বিন্দু অমূল্যকে ছাড়িয়া দিয়া হঠাৎ গলায় আঁচল দিয়া হাত জোড় করিয়া বলিল, তোমাদের পায়ে পড়ি বড়গিরি, সামনে থেকে একটু যাও। তোমাদের পাচজনের মধ্যস্থতার জালায় ওর প্রাণটাই মার খেয়ে যাবে ।
অন্নপূর্ণ বাকশূন্ত হইয়া দাড়াইয়া রহিলেন । বিন্দু অমূল্যর একটা কান ধরিয়া টানিয়া আনিয়া ঘরের এক কোণে দাড় করাইয়া দিয়া বলিল, যেমন বজাত ছেলে তুমি, তেমনি তোমার শাস্তি হওয়া চাই । সমস্তদিন ঘরে বন্ধ থাক। দিদি বাইরে এস। আমি দোর বন্ধ করব। বলিয়া বাহিয়ে আসিয়া শিকল তুলিয়া দিল।
বেলা তখন প্রায় একটা বাজে, অন্নপূর্ণ আর থাকিতে না পারিয়া বলিল, ই ছোটবে, সত্যি আজ তুই অমূল্যকে খেতে দিবিনে ? তার জন্য কি বাড়িমৃদ্ধ লোক উপোস থাকবে ?
বিন্দু জবাব দিল, বাড়িম্বদ্ধ লোকের ইচ্ছে। অন্নপূর্ণ বলিলেন, এ তোর কি-রকম কথা ছোটবে। বাড়ির মধ্যে ঐ একটি ছেলে, সে উপোস করে থাকলে, তোর আমার কথা ছেড়ে দে, দাসী-চাকরেই বা মুখে ভাত তোলে কি করে বল দেখি । -
বিন্দু জিদ করিয়া বলিল, তা আমি জানিনে । অন্নপূর্ণ বুঝিলেন তর্ক করিয়া আর লাভ হইবে না, বলিলেন আমি বলচি, বড়বোনের কথাটা রাখ, আজ তাকে মাপ কর । তা ছাড়া পিত্তি পড়ে অস্থখ হলে তোকেই ভুগতে হবে।
বেলার দিকে চাহিয়া বিন্দু নিজেই নরম হইয়া আসিতেছিল, কদমকে ডাকিয়া বলিল, ষা নিয়ে আয় তাকে । তোমাদেরও বলে রাখচি দিদি, ভবিস্তুতে আমার
কথায় কথা কইলে ভাল হবে না ।
গোলযোগটা এইখানেই সেদিনের মত খামিয়া গেল।
&ዓፄ
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/২৮৫
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
