পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পিতাকে সহসা থামিতে দেখিয়া অচলা মুখপানে চাহিয়া কহিল, কি মনে হয় না বাবা ? কেদারবাবু সাবধানে অগ্রসর হইবার জন্য মুখের কথাটা চাপিয়া গিয়া বলিলেন, তোমার কি মনে হয় না যে, স্বরেশ যে ব্যবহার আমাদের সঙ্গে করে গেল, তার জন্য সে বিশেষ অনুতপ্ত ? অচলা তৎক্ষণাং সায় দিয়া বলিল, আমার তা নিশ্চয় মনে হয় বাবা। কেদারবাবু প্রবলবেগে মাথা নাড়িয়া বলিলেন, নিশ্চয়! নিশ্চয়! একশ’ বার । তা না হলে সে এভাবে পালাত না—কোথাকার একটা তুচ্ছ স্ত্রীলোককে বাচাতে আগুনের মধ্যে ঢুকত না । আমার নিশ্চয় বোধ হচ্ছে, সে শুধু অমৃতাপে দগ্ধ হয়েই নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে গিয়েছিল । সত্য কি না বল দেখি মা ! অচলা পিতার ঠিক জবাবটা এড়াইয়া গিয়া ধীরে ধীরে কহিল, শুনেচি, পরকে বাচাতে এইরকম আরও দু একবার তিনি নিজের প্রাণ বিপদাপন্ন করেছিলেন । কথাটা কেদারবাবুর তেমন ভাল লাগিল না । বলিলেন, সে আলাদা কথা অচলা । কিন্তু এ যে আগুনের মধ্যে বাপ দেওয়া ! এ যে নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা ! দুটোর মধ্যে প্রভেদ দেখতে পাচ্চ না ? অচলা আর প্রতিবাদ না করিয়া বলিল, তা বটে। কিন্তু যারা মহৎ প্রাণ, তাদের যে কোন অবস্থাতেই, পরের বিপদে নিজের বিপদ মনে থাকে না— কেদারবাবু উৎসাহে লাফাইয়া উঠিলেন । দৃপ্তকণ্ঠে বলিলেন, ঠিক, ঠিক ! তাই ত তোকে বলচি অচলা—সে একটা মহৎ প্রাণ । একেবারে মহৎ প্রাণ । তার সঙ্গে কি আর কারে তুলনা চলে ! এত লোক ত আছে, কিন্তু কে কাকে পাচ পাচ হাজার টাকা একটা কথায় ফেলে দিতে পারে, বল দেখি ! সে যাই কেন না করে থাক্‌, বড় দুঃখেই করে ফেলেছে—এ আমি তোমাকে শপথ করে বলতে পারি। কিন্তু শপথের কিছুমাত্র প্রয়োজন ছিল না । এ সত্য অচলা নিজে যত জানিত, তিনি তাহার শতাংশের একাংশও জানিতেন না। কিন্তু জবাব দিতে পারিল না— নিমিষের লজ্জা পাছে তাহার মুখে ধরা পড়ে, এই ভয়ে তাড়াতাড়ি ঘাড় হেঁট করিয়া মৌন হইয়া রহিল। কিন্তু বৃদ্ধের সতৃষ্ণ-দৃষ্টির কাছে তাহ ফাকি পড়িল না। তিনি পুলকিত-চিত্তে বলিতে লাগিলেন, মানুষ ত দেবতা নয়—সে যে মানুষ ! তার দেহ দোষে-গুণে জড়ানো ; কিন্তু তাই বলে ত তার দুৰ্ব্বল মুহূর্তের উত্তেজনাকে তার স্বভাব বলে ধরে নেওয়া চলে না! বাইরের লোক যে যা ইচ্ছে বলুক অচলা, কিন্তু আমরাও যদি এইটেকেই দোষ বলে বিচার করি, তাদের সঙ্গে আমাদের তফাৎ থাকে কোনখানে বল দেখি ? বড়লোক ত ঢের আছে, কিন্তু এমন করে দিতে 登切”