পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शृंश्मीई সুরেশ ধীরে ধীরে কহিল, ভালই। ইহার পরে কিছুক্ষণ পৰ্য্যস্ত কেহই যেন কোন কথা খুজিয়া পাইল না। স্বরেশ অকস্মাৎ যেন চকিত হইয়া বলিয়া উঠিল, আর একটা কথা । তোমার জন্যে যে আমি কত সয়েছি, সে কি তোমার কখনো— অচলা দুই কানে অঙ্গুলি দিয়া বলিয়া উঠিল, এ-সমস্ত আলোচনা আপনি মাপ করবেন । স্বরেশ খোলা দরজায় দুই হাত প্রসারিত করিয়া অচলার পলায়নের পথ রুদ্ধ করিয়া বলিল, ন, মাপ আমি করতেই পারিনে, তোমাকে শুনতেই হবে । তাহার চোখে সেই দৃষ্টি—যাহা মনে পড়িলে আজও অচলা শিহরিয়া ওঠে । একটুখানি পিছাইয়া গিয়া সভয়ে কহিল, আচ্ছা বলুন— স্বরেশ কহিল, ভয় নেই, তোমার গায়ে আমি হাত দেব না—আমার এখনো সে জ্ঞান আছে। বলিয়া পুনরায় চৌকির উপরে বসিয়া পড়িয়া কহিল, এই কথাটা তোমাকে মনে রাখতেই হবে যে, আমি তোমার ওপর সমস্ত অধিকার হারালেও, আমার ওপর তোমার সেই অধিকার বর্তমান আছে। অচলা বাধা দিয়া কহিল, এ মনে রাখায় আমার কোন লাভ নেই—কিন্তু—, বলিতে বলিতে দেখিতে পাইল কথাটা যেন সজোরে আঘাত করিয়া মুরেশকে পলকের জন্য বিবর্ণ করিয়া ফেলিল এবং সেই মুহূর্তে নিজেও স্পষ্ট অনুভব করিল অনুতাপের কথা তাহার নিজের পিঠের উপর সজোরে আসিয়া পড়ল। ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া এবারে সে কোমল-কণ্ঠে বলিল, স্বত্বেশবাবু, এ-সব কথা আমারও শোনা পাপ, আপনারও বলা উচিত নয় । কেন আপনি এ-সব কথা তুলে আমাকে দুঃখ দিচ্ছেন ? স্বরেশ তাহার মুখের উপর দৃষ্টি রাখিয়া বলিল, দুঃখ কি পাও অচলা । অচলার মুখ দিয়া অকস্মাৎ বাহির হইয়া গেল, আমি কি পাষাণ স্বরেশবাৰু ? স্বরেশ তাহার সেই দৃষ্টি অচলার মুখের উপর হইতে নামাইল না বটে, কিন্তু অচলার দুই চক্ষু নত হইয়া পড়িল স্বরেশ ধীরে ধীরে বলিল, ব্যস, এই আমার চিরজীবনের সম্বল রইল অচলা, এর বেশি আর চাইনে । বলিয়া এক মুহূর্ত স্থির থাকিয়া কহিল, তুমি যখন পাষাণ নও, তখন এই শেষ ভিক্ষে থেকে আর আমাকে কিছুতে বঞ্চিত করতে পারবে না। তোমার স্বখের ভার যার ওপর ইচ্ছে থাকুক, কিন্তু তোমার হাত থেকে দুঃখই যখন শুধু পেয়ে এসেচি, তখন তোমারও সমস্ত দুঃখের বোঝা আজ থেকে আমার—এই বর জাঙ্গ মাগি—আমাকে ভিক্ষা দাও। বলিতে বলিতেই অঙ্গভারে তাহার কণ্ঠরোধ হইয়া গেল। অচলার চোখ দিয়াও 23.