শ্রাবণসন্ধ্যা
কাজের পরিচয়পত্র নিয়ে প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করে, আর সৌন্দর্যের পরিচয়পত্র নিয়ে আমার দ্বারে এসে আঘাত করে। এক দিকে আসে বন্দীর মতো, আর-এক দিকে আসে মুক্তস্বরূপে—এর একটা পরিচয়ই যে সত্য আর অন্যটা সত্য নয়, এ কথা কেমন করে মানব। ওই ফুলটি গাছপালার মধ্যে অনবচ্ছিন্ন কার্যকারণসূত্রে ফুটে উঠেছে এ কথাটাও সত্য, কিন্তু সে তো বাহিরের সত্য—আর অন্তরের সত্য হচ্ছে: আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে।
ফুল মধুকরকে বলে, ‘তোমার ও আমার প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তোমাকে আহ্বান করে আনব বলে আমি তোমার জন্যেই সেজেছি।’ আবার মানুষের মনকে বলে, ‘আনন্দের ক্ষেত্রে তোমাকে আহ্বান করে আনব বলে আমি তোমার জন্যেই সেজেছি।’ মধুকর ফুলের কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস ক’রে কিছুমাত্র ঠকে নি, আর মানুষের মনও যখন বিশ্বাস ক’রে তাকে ধরা দেয় তখন দেখতে পায় ফুল তাকে মিথ্যা বলে নি।
ফুল যে কেবল বনের মধ্যেই কাজ করছে তা নয়— মানুষের মনের মধ্যেও তার যেটুকু কাজ তা সে বরাবর করে আসছে।
আমাদের কাছে তার কাজটা কী। প্রকৃতির দরজায় যে ফুলকে যথাঋতুতে যথাসময়ে মজুরের মতো হাজরি দিতে হয়, আমাদের হৃদয়ের দ্বারে সে রাজদূতের মতো উপস্থিত হয়ে থাকে।
সীতা যখন রাবণের ঘরে একা বসে কাঁদছিলেন তখন একদিন যে দুত কাছে এসে উপস্থিত হয়েছিল সে রামচন্দ্রের আংটি সঙ্গে করে এনেছিল; এই আংটি দেখেই সীতা তখনি বুঝতে পেরেছিলেন এই দূতই তাঁর প্রিয়তমের কাছ থেকে এসেছে— তখনি তিনি বুঝলেন রামচন্দ্র তাঁকে ভোলেন নি, তাঁকে উদ্ধার করে নেবেন বলেই তাঁর
৯৭