শান্তিনিকেতন
আমাদের ‘হাঁ’। বাল্যের মধ্যে যে হাঁ সে তিনিই, সেইখানেই বাল্যের সৌন্দর্য; যৌবনের মধ্যে যে হাঁ সেও তিনিই, সেইখানেই যৌবনের শক্তি সামর্থ্য; বার্ধক্যের মধ্যে যে হাঁ সেও তিনিই, সেইখানেই বার্ধক্যের চরিতার্থতা। খেলার মধ্যেও পূর্ণরূপে তিনি, সংগ্রহের মধ্যেও পূর্ণরূপে তিনি, এবং ত্যাগের মধ্যেও পূর্ণরূপে তিনি।
এইজন্যেই পথও আমাদের কাছে এমন রমণীয়, এইজন্যে সংসারকে আমরা ত্যাগ করতে চাই নে। তিনি-যে পথে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলেছেন। পথের উপর আমাদের এই-যে ভালোবাসা এ তারই উপর ভালোবাসা। মরতে আমরা যে এত অনিচ্ছা করি এর মধ্যে আমাদের মনের এই কথাটি আছে যে, ‘হে প্রিয়, জীবনকে তুমি আমাদের কাছে প্রিয় করে রেখেছ।’— ভুলে যাই, যিনি প্রিয় করেছেন মরণেও তিনিই আমাদের সঙ্গে চলেছেন।
আমাদের বলবার কথা এ নয় যে, এটা অপূর্ণ, ওটা অপূর্ণ, অতএব এ-সমস্তকে আমরা পরিত্যাগ করব। আমাদের বলবার কথা হচ্ছে এই যে, এরই মধ্যে যিনি পূর্ণ তাঁকে আমরা দেখব। ক্ষেত্রকে বড়ো করেই যে আমরা পূর্ণকে দেখি তা নয়, পূর্ণকে দেখলেই আমাদের ক্ষেত্র বড়ো হয়ে যায়। আমরা যেখানেই আছি, যে অবস্থায় আছি, সকলের মধ্যেই যদি তাকে দেখবার অবকাশ না থাকত, তা হলে কেউ কোনো কালেই তাকে দেখবার আশা করতে পারতুম না। কারণ, আমরা যে যতদূরই অগ্রসর হই-না, অনন্ত যদি ধরা না দেন তবে কোনো কৌশলে কারও তাঁকে নাগাল পাবার সম্ভাবনা কিছুমাত্র থাকে না।
কিন্তু, তিনি অনন্ত বলেই সর্বত্রই ধরা দিয়েই আছেন— এইজন্যে তাঁর আনন্দরূপের অমৃতরূপের প্রকাশ সকল দেশে, সকল কালে।
১১৮