বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শেষ

 কোনো-একটা জায়গায় পূর্ণতা আছে এ কথা মানুষ যখন অস্বীকার করে তখন চলাটাকেই মানুষ একমাত্র গৌরবের জিনিস ব’লে মনে করে। ভোগ বা দান যে জানে না সঞ্চয়কেই সে একান্ত করে জানে।

 কিন্তু, ভোগের বা দানের মধ্যে সঞ্চয় যখন আপনাকে ক্ষয় করতে থাকে তখন এক আকারে সঞ্চয়ের অবসান হয় বটে, কিন্তু আর-এক আকারে তারই সার্থকতা হতে থাকে। যেখানে সঞ্চয়ের এই সার্থক অবদান নেই সেখানে লজ্জাজনক কৃপণতা।

 জীবনকে যারা এইরকম কৃপণের মতো দেখে তারা কোথাও কোনোমতেই থামতে চায় না, তারা কেবলই বলে ‘চলো, চলো, চলো’। থামার দ্বারা তাদের চলা সম্পূর্ণ ও গভীর হয়ে ওঠে না; তারা চাবুক এবং লাগামকেই স্বীকার করে, বৃহৎ এবং সুন্দর শেষকে তারা মানে না।

 তারা যৌবনকে যৌবন পেরিয়েও টানাটানি করে নিয়ে চলে; সেই দুঃসাধ্য ব্যাপারে কাঠ খড় এবং চেষ্টার আর অবধি থাকে না— তা ছাড়া কত লজ্জা, কত ভাবনা, কত ভয়।

 ফল যখন পাকে তখন শাখা ছেড়ে যাওয়াই তার গৌরব। কিন্তু, শাখা ত্যাগ করাকে যদি সে দীনতা ব’লে মনে করে তবে তার মতো কৃপাপাত্র আর কে আছে!

 নিজের স্থানকে অধিকার করার সঙ্গে সঙ্গেই এই কথাটি মনের মধ্যে রাখতে হবে যে, এই অধিকারকে সম্পূর্ণ করে তুলে একে ত্যাগ করে যাব। ‘এই অধিকারকে যেমন করে পারি শেষ পর্যন্ত টানাহেঁচড়া করে রক্ষা করতেই হবে, তাতেই আমার সম্মান, আমার কৃতিত্ব’ এই শিক্ষাই যারা শিশুকাল থেকে শিখে এসেছে অপঘাত যতক্ষণ তাদের

১২৯