জাগরণ
জাগা, ভূমানন্দে জাগা আছে— এই বিচিত্র জাগায় মানুষকে ডাক পড়েছে; যেখানে সাড়া দিচ্ছে না সেইখানেই সে বঞ্চিত হচ্ছে; যেখানে সাড়া দিচ্ছে সেইখানেই ভূমার মধ্যে তার আত্ম-উপলব্ধি সম্পূর্ণ হচ্ছে, সেইখানেই তার চারি দিকে শ্রী সৌন্দর্য ঐশ্বর্য আনন্দ পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। মানুষের ইতিহাসে কোন্ স্মরণাতীত কাল থেকে জাতির পর জাতির উত্থানপতনের বজ্রনির্ঘোষে মনুষ্যত্বের প্রত্যেক দ্বারে বাতায়নে এই মহা উদ্বোধনের আহ্বানবাণী ধ্বনিত হয়ে এসেছে; বলছে, ‘ভূমার মধ্যে জাগ্রত হও, আপনাকে বড়ো করে জানো।’ বলছে, ‘নিজের কৃত্রিম আচারের, কাল্পনিক বিশ্বাসের, অন্ধ সংস্কারের তমিস্র-আবরণে নিজেকে সমাচ্ছন্ন করে রেখো না— উজ্জল সত্যের উন্মুক্ত আলোকের মধ্যে জাগ্রত হও: আত্মানং বিদ্ধি।’
এই-যে জাগরণ, যে জাগরণে আমরা আপনাকে সত্যের মধ্যে দেখি, জ্যোতির মধ্যে দেখি, অমৃতের মধ্যে দেখি—যে জাগরণে আমরা প্রতিদিনের স্বরচিত তুচ্ছতার সংকোচ বিদীর্ণ ক’রে আপনাকে পূর্ণতার মধ্যে বিকশিত করে দেখি—সেই জাগরণেই আমাদের উৎসব। তাই আমাদের উৎসবদেবতা প্রতিদিনের নিদ্রা থেকে আজ এই উৎসবের দিনে আমাদের জাগিয়ে তোলবার জন্যে দ্বারে এসে তাঁর ভৈরবরাগিণীর প্রভাতী গান ধরেছেন— আজ আমাদের উৎসব সার্থক হোক।
আমরা প্রত্যেকেই এক দিকে অত্যন্ত ছোটো, আর-এক দিকে অত্যন্ত বড়ো। যে দিকটাতে আমি কেবলমাত্রই আমি— সকল কথাতেই ঘুরে ফিরে কেবলই আমি— কেবল আমার সুখদুঃখ, আমার আরাম, আমার আয়োজন, আমার প্রয়োজন, আমার ইচ্ছা— যে দিকটাতে আমি সবাইকে বাদ দিয়ে আপনাকে একান্ত করে দেখতে চাই—
১৫৩