শান্তিনিকেতন
আমায় প্রভু, দেখাইয়ো না সুখের প্রলোভন—
তোমার সাথে দুঃখ বহি সেই তো পরম ধন।
ভোগের দাসী তোমার নহি—তাই তো ভুলাও নাকো,
মিথ্যা সুখে মিথ্যা মানে দূরে ফেলাও নাকো।
পতিব্রত। সতী আমি— তাই তো তোমার ঘরে
হে ভিখারি, সব দারিদ্র্য আমার সেবা করে।
সুখের ভৃত্য নই তব, তাই পাই না সুখের দান—
আমি তোমার প্রেমের পত্নী এই তো আমার মান।
মানুষ যখন প্রকাশের সম্পূর্ণতাকে চাবার জন্যে সচেতন হয়ে জাগ্রত হয়ে ওঠে তখন সে সুখকে সুখই বলে না। তখন সে বলে: যো বৈ ভূমা তৎ সুখম্। যা ভূমা তাই সুখ। আপনার মধ্যে যখন সে ভূমাকে চায় তখন আর আরামকে চাইলে চলবে না, স্বার্থকে চাইলে চলবে না; তখন আর কোণে লুকোবার জো নেই; তখন কেবল আপনার হৃদয়োচ্ছ্বাস নিয়ে আপনার আঙিনায় কেঁদে লুটিয়ে বেড়াবার দিন আর থাকে না। তখন নিজের চোখের জল মুছে ফেলে বিশ্বের দুঃখের ভার কাঁধে তুলে নেবার জন্যে প্রস্তুত হতে হবে। তখন কর্মের আর অন্ত নেই, ত্যাগের আর সীমা নেই। তখন ভক্ত বিশ্ববোধের মধ্যে, বিশ্বপ্রেমের মধ্যে, বিশ্বসেবার মধ্যে আপনাকে ভূমার প্রকাশে প্রকাশিত করতে থাকে।
ভক্তের জীবনের মধ্যে যখন সেই প্রকাশকে আমরা দেখি তখন কী দেখি? দেখি সে তর্কবিতর্ক নয়, সে তত্ত্বজ্ঞানের টীকাভাষ্য বাদপ্রতিবাদ নয়, সে বিজ্ঞান নয়, দর্শন নয়— সে একটি একের সম্পূর্ণতা, অখণ্ডতার পরিব্যক্তি। যেমন জগৎকে প্রত্যক্ষ অনুভব করবার জন্যে বৈজ্ঞানিক
২১০