বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতন না এবং দূরে বসে বসে বলবে পথে চলাই যায় না। একটি ছেলে নিতান্ত একটি সহজ কবিতা আবৃত্তি করে পড়ছিল ; আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলুম, “তুমি ষে কবিতাটি পড়লে তাতে কী বলেছে, তার থেকে তুমি কী বুঝলে ? সে বললে, ‘সে কথা তো আমাদের মাস্টারমশায় বলে দেয় নি। ক্লাসে পড়া মুখস্থ করে তার একটা ধারণ হয়ে গেছে যে, কবিতা থেকে নিজের মন দিয়ে বোঝবার কিছুই নেই । মাস্টার-মশায় তাকে ব্যাকরণ অভিধান সমস্ত বুঝিয়েছে, কেবল এই কথাটি বোঝায় নি যে, রসকে নিজের হৃদয় দিয়েই বুঝতে হয়, মাস্টারের বোঝা দিয়ে বুঝতে হয় না। সে মনে করেছে বুঝতে পারার মানে একটা কথার জায়গায় আর-একটা কথা বসানে, ‘সুশীতল শব্দের জায়গায় ‘স্বস্নিগ্ধ' শব্দ প্রয়োগ করা। এপর্যন্ত মাস্টার তাকে ভরসা দেয় নি, তার মনের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ অপহরণ করেছে। যেখানে বোঝা তার পক্ষে নিতান্ত সহজ সেখানেও বুঝতে পারে বলে তার ধারণাই হয় নি । এইজন্যে ভয়ে ভয়ে সে আপনার স্বাভাবিক শক্তিকে খাটায় না । সেও বলে ‘আমি বুঝি নে', আমরাও বলি সে বোঝে না। এলাহাবাদ শহরে যেখানে গঙ্গা যমুনা দুই নদী একত্র মিলিত হয়েছে সেখানে ভূগোলের ক্লাসে যখন একটি ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ‘নদী জিনিসটা কী— তুমি কখনো কি দেখেছ সে বললে, “না। ভূগোলের নদী জিনিসটার সংজ্ঞা সে অনেক মার খেয়ে শিখেছে। এ কথা মনে করতে তার সাহসই হয় নি যে, যে নদী দুইবেলা মে চক্ষে দেখেছে, যার মধ্যে সে মানন্দে স্নান করেছে, সেই নদীই তার ভূগোলবিবরণের নদী, তার বহু দুঃখের এগ জামিন-পাসের নদী : তেমনি করেই আমাদের ক্ষুত্র পাঠশালার মাস্টার-মশায়রা কোনো

  • ৩২৪