অমৃতের পুত্র জমিয়ে তুলেছে। সে বলে, ‘আকাশের আলোকে আমি বিশ্বাস করব না, আমার ঘরের মাটির দীপকে আমি বিশ্বাস করব ; আলোক নতুন কিন্তু আমার ওই দীপ সনাতন । তার শয়নগৃহে বিষাক্ত বাতাস জমা হয়ে রয়েছে ; সেইটেতেই সে পড়ে থাকতে চায়, কেননা সে যে হল তার সঞ্চিত বাতাস, সে নতুন বাতাস নয় । ঈশ্বরের আলো, ঈশ্বরের বাতাস কেবলই যে নতুনকে আনে সেই নতুনকে সে বিশ্বাস করছে না। ঘরের কোণের অন্ধকারটা পুরাতন, তাকেই সে পূজা করে । এইজন্য ঈশ্বরকে ইতিহাসের বেড়া যুগে যুগে ভাঙতে হয়। র্তার আলোককে র্তার আকাশকে যা নিষেধ করে দাড়ায় তারই উপরে একদিন তার বজ্র এসে পড়ে, সেইখানে একদিন তার ঝড় বয়। তবে মুক্তি। স্ত,পাকার সংস্কার ঘা জমা হয়ে উঠে সমস্ত চলবার পথকে আটকে বসে আছে সেইখানে রক্তস্রোত বয়ে যায়। তবে মুক্তি । স্বার্থের সঞ্চয় যখন অভ্ৰভেদী হয়ে ওঠে তখন কামানের গোলা দিয়ে তাকে ভাঙতে হয়। তবে মুক্তি। তখন কান্নায় আকাশ ছেয়ে যায়, কিন্তু সেই কান্নার ধার। নইলে উত্তাপ দূর হবে কেমন করে ? চিরদিন এমনি করে সত্যের সঙ্গে লড়াই করে এসেছে মানুষ । মানুষের নিজের হাতের গড় জিনিসের উপর মানুষের বড়ো মোহ— সেইজন্য মানুষ নিজের হাতেই নিজে মার খায়। মানুষ নিজের হাতে নিজেকে মারবার গদা তৈরি করে। সেইজন্য আজ সেই নিজের হাতের গড়া গদার আঘাতে রাজ্য-সাম্রাজ্যের সমস্ত সীমা চূর্ণ হয়ে যাচ্ছে । মানুষের স্বাৰ্থবৃদ্ধি আজ বলছে, ‘ধর্মবুদ্ধির কোনো কথা আমি শুনতে চাই না, আমি গায়ের জোরে সব কেড়েকুড়ে নেব।” সংসারের V286:
পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৬
অবয়ব