শান্তিনিকেতন যা-কিছু আছে সমস্ত আমার মধ্যে সার্থক হয়। এই সার্থকতাটি বৃহৎভাবে বিশ্বের মধ্যে নেই, অথচ খণ্ডভাবে আমার মধ্যে আছে, এমন কথা মনে করতে পারে নি বলেই মানুষ বলেছে ‘সত্যং জ্ঞানং’ । সত্য সর্বত্র, জ্ঞানও সর্বত্র । সত্য কেবলই জ্ঞানকে ফল দান করছে, জ্ঞান কেবলই সত্যকে সার্থক করছে— এর আর অবধি নেই। এ যদি না হয় তবে অন্ধ স্থষ্টির কোনো অর্থই নেই। উপনিষদে ব্ৰহ্ম সম্বন্ধে বলেছে তার ‘স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয় চ’ । অর্থাৎ, তার জ্ঞান বল ও ক্রিয়া স্বাভাবিক। র্তার বল আর ক্রিয়া এই তো হল যা-কিছু— এই তো হল জগৎ । চার দিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বল কাজ করছে— স্বাভাবিক এই কাজ— অর্থাৎ, আপনার জোরেই আপনার এই কাজ চলছে— এই স্বাভাবিক বল ও ক্রিয়া যে কী জিনিস তা আমরা আমাদের প্রাণের মধ্যে স্পষ্ট করে বুঝতে পারি। এই বল ও ক্রিয়া হল বাহিরের সত্য । তারই সঙ্গে সঙ্গে একটি অস্তরের প্রকাশ আছে, সেইটি হল জ্ঞান। আমরা বুদ্ধিতে বোঝবার চেষ্টায় দুটিকে স্বতন্ত্র করে দেখছি, কিন্তু বিরাটের মধ্যে এ একেবারে এক হয়ে আছে । সর্বত্র জ্ঞানের চালনাতেই বল ও ক্রিয়া চলছে এবং বল ও ক্রিয়ার প্রকাশেই জ্ঞান আপনাকে উপলব্ধি করছে। ‘স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়া চ’ মানুষ এমন কথা বলতেই পারত না যদি সে নিজের মধ্যে স্বাভাবিক জ্ঞান ও প্রাণ এবং উভয়ের যোগ একান্ত অনুভব না করত । এইজন্যই গায়ত্রীমন্ত্রে এক দিকে বাহিরের ভূৰ্জুব স্ব’ এবং অন্ত দিকে অন্তরের ধী উভয়কেই একই পরমশক্তির প্রকাশরুপে ধ্যান করবার উপদেশ আছে । կ: যেমন প্রদীপের মুখের ছোটো শিখাটি বিশ্বব্যাপী উত্তাপেরই অঙ্গ \©ፃe ,
পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮১
অবয়ব