শাস্তিনিকেতন উদবোধনের দিন। আজ পৃথিবীর প্রলয়দাহের রুদ্র আলোকে পিতা, তুমি দাড়িয়ে আছ। প্রলয়-হাহাকারের উর্ধ্বে শুপাকার পাপকে দগ্ধ করে সেই দহনদীপ্তিতে তুমি প্রকাশ পাচ্ছ, তুমি জেগে রয়েছ। তুমি আজ ঘুমোতে দেবে না ; তুমি আঘাত করছ প্রত্যেকের জীবনে কঠিন আঘাত। যেখানে প্রেম আছে জাগুক, যেখানে কল্যাণের বোধ আছে জাগুক— সকলে আজ তোমার বোধে উদবোধিত হয়ে উঠুক। এই এক প্রচণ্ড আঘাতের দ্বারা তুমি সকল আঘাতকে নিরস্ত করে । সমস্ত বিশ্বের পাপ হৃদয়ে হৃদয়ে, ঘরে ঘরে, দেশে দেশে পুঞ্জীভূত— তুমি আজ সেই পাপ মার্জনা করে, দুঃখের দ্বারা মার্জন করো, রক্তস্রোতের দ্বারা মার্জন করে, অগ্নিবৃষ্টির দ্বারা মার্জনা করো ' এই প্রার্থনা, সমস্ত মানবচিত্তের এই প্রার্থনা, আজ আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে জাগ্রত হোক। বিশ্বানি দুরিতানি পরাস্তব । বিশ্বপাপ মার্জনা করো। এই প্রার্থনাকে সত্য করতে হবে— শুচি হতে হবে, সমস্ত হৃদয়কে মার্জনা করতে হবে । আজ সেই তপস্যার আসনে, পূজার আসনে উপবিষ্ট হও । যে পিতা সমস্ত মানবসস্তানের দুঃখ গ্রহণ করছেন, যার বেদনার অস্ত নেই, প্রেমের অস্ত নেই, যার প্রেমের বেদন উদ্বেল হয়ে উঠেছে, তার সম্মুখে উপবিষ্ট হয়ে সেই র্তার প্রেমের বেদনাকে আমরা সকলে মিলে গ্রহণ করি । ৯ ভাদ্র ১৩২১
পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১৯
অবয়ব