স্বাক্টর ক্রিয়া আপনাকে এবং জগৎকে সত্য করে জানবার ও দেখবার জন্যই মানুষ এই জগতে এসেছে। মানুষও যে-সমস্ত অনুষ্ঠান রচনা করেছে— তার বিদ্যালয়, তার রাজ্য সাম্রাজ্য, নীতি ধর্ম, সমস্তেরই মূল কথা এই যে, মানুষ যে যথার্থ কী সেটা মানুষকে প্রকাশ করতে হচ্ছে । মামুষের অনুষ্ঠানে মানুষই বিরাট রূপ ধরে প্রকাশ পাচ্ছে । সেইজন্য সমস্ত অনুষ্ঠানের ভিতরকার আদর্শ হচ্ছে মানুষকে মুক্তি দেওয়া । মানুষ নিজেকে যে ছোটো বলে জানছে, মানুষের ধর্ম কর্ম তারই প্রতিবাদ করে তাকে বলছে, ‘তুমি ছোটাে নও, তুমি আপনার মধ্যে আপনি বদ্ধ নও, তুমি সমস্ত জগতের— তুমি বড়ো, বড়ো, বড়ো।” কিন্তু, মানুষের এই বড়ো বড়ো অনুষ্ঠানের মধ্যে মানুষের ভিতরে যে শয়তান রয়েছে সে প্রবেশ করছে । মানুষের ধর্ম তাকে ভূমার সঙ্গে বড়োর সঙ্গে যোগযুক্ত করবে, সকলকে এক করবে— এই তো তার উদ্দেশ্য । কিন্তু, সেই ধর্মের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করে মানুষের ঐক্যকে খণ্ড খণ্ড করে দিচ্ছে ; কত অন্যায়, কত অসত্য, কত সংকীর্ণতা হষ্টি করছে । মামুষের ‘জাতীয়তা’, ইংরাজিতে To nationality বলে, ক্রমশ উদভিন্ন হয়ে উঠেছে এইজন্য যে তার মধ্যে মানুষের সাধনা মিলিত হয়ে মানুষের এক বৃহৎ রূপকে ব্যক্ত করবে, ক্ষুদ্র স্বার্থ থেকে প্রত্যেক মানুষকে মুক্ত করে বৃহৎ মঙ্গলের মধ্যে সকলকে সম্মিলিত করবে। কিন্তু, সেই তপস্যা ভঙ্গ করবার জন্যে শয়তান সেই জাতীয়তাকেই অবলম্বন করে কত বিরোধ, কত আঘাত, কত ক্ষুদ্রতাকে দিন দিন তার মধ্যে জাগিয়ে তুলছে! মানুষের তপস্যা এক দিকে, অন্য দিকে তপস্যা ভঙ্গ করবার আয়োজন— এ দুইই পাশাপাশি রয়েছে । 8 > >
পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২২
অবয়ব