বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতন আনন্দের গভীর বাণী জেগে উঠতে পারে— এই কথাই মনে হয়। কিন্তু, তা নয়, সেই বিরলতার মধ্যেই যে সাধকের উৎসব সম্পূর্ণ হয় তা কখনোই সত্য নয়। মানুষের এই কোলাহলময় হাটে যেখানে কেনাবেচার বিচিত্র লীলা চলেছে, এরই মধ্যে, এই মুখর কোলাহলের মধ্যেই র্তার পূজার গীত উঠছে— এর থেকে দূরে সরে গিয়ে কখনোই তার উৎসব নয়। আকাশের তারার তারায় যে সংগীত উঠছে যুগযুগান্তর ধরে সে সংগীতের কেবলই পুনরাবৃত্তি চলছে। সেখানে কোনো কোলাহল নেই, ভিড় নেই, ঠেলাঠেলি নেই— নক্ষত্ৰলোকে যেন বিশ্বরূপ বাউল তার একতারার একটি স্বর ফিরে ফিরে বাজাচ্ছে। কিন্তু, মানুষের জগতে যে গান উঠছে সে কি একটি তারের সংগীত ? কত যুদ্ধবিগ্রহ বিরোধ-সংগ্রামের কত বিচিত্র তার সেখানে ঝংকৃত হচ্ছে—তার বৈচিত্র্যের সীমা নেই। কিন্তু, এই সমস্ত বৈচিত্র্যের মধ্যে, বিরোধের মধ্যে, শাস্তির সুর বাজছে । মানুষের চারি দিকে ষড়রিপুর হানাহানি, তাণ্ডবলীলা চলেছে— কিন্তু, এত বেস্থর এসে কই এই একটি স্বরকে তো লুপ্ত করতে পারলে না! সকল বিরোধ, সকল বিপ্লব, সকল যুদ্ধ বিগ্রহের ভিতর দিয়ে এই স্বর বেজে উঠল : শাস্তং শিবং অদ্বৈতম্। মানুষের ইতিহাসে এই-যে উৎসব চলছে তারই কি একটি প্রতিরূপ আজকের এই মেলার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না ? এখানে কেউ বাজার করছে, কেউ খেলা করছে, কেউ যাত্রা শুনছে— কিন্তু নিষেধ তো করা হয় নি— বলা হয় নি এখানে উপাসনা হচ্ছে, তোমরা সাধু হয়ে চুপ করে বসে থাকো' । সমস্ত পৃথিবী জুড়ে মাহুষের জগতের যে-একটা প্রচণ্ড কোলাহল চলছে শান্তিনিকেতনের নিভৃত শাস্তিকে তা আবিল করুক। মানুষই কোলাহল করে, আর তো কেউ করে ৪২৩