পাতা:শান্তিলতা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খানিকটা দেখবার চেষ্টা করলে ঘাড়টা যেন মটকে যাবে মনে হয়। তবে, সারা আকাশ জুড়ে পুঞ্জ পুঞ্জ সাদা মেঘের একমুখী সমান গতিতে ভেসে চলা দেখতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। শান্তিলতার। ছেলেবেলা থেকে কত দেখেছে। আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেসে চলাবার লীলা, আর আজ-ভাঙা কাল-আস্ত চান্দটার সাথে লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে ঘুমচােখ জড়িয়ে এনে-এনেই সে যেন বড় হয়েছে- সংসারে উদয়াস্ত হাড়ভাঙা খাটুনি আর একটানা বকুনির তিতে স্বাদ ভুলে গিয়ে। দাওয়ার কোণের দিকে খানিকটা ঘিরে চাদির রান্নাঘর। চালটা টিনের, দাওয়াও একটু চওড়া আছে। সামনাসামনি এই দুটি ঘরেরই নামমাত্র একটু দাওয়া আছে, অন্য ঘরগুলির বেড়া উঠেছে ভিটের শেষ ইঞ্চি স্থান দখল করে। ছোট লণ্ঠনটা জেলে চাদি তার ঘূপচি রান্নাঘরের ডিবরিটা নিভিয়ে দেয়। খেলবার মতো ছোট লণ্ঠনটায় সামান্য বেশি তেল পোড়ে। বাইরে হাওয়ায় যে নিভে যায় না। সে সুবিধাটুকুর দাম তো দিতে হবে। ভাঙা কঁাসরের মতো খ্যানখ্যান করে ওঠে চাদির গলা : —এসে বসে যার যারটা খেয়ে লিয়ে যাও। অত ঘুম চলবে নি, পিটিয়ে হাড় গুড়িয়ে দেব। স্বামী, দেওর, পাঁচটা ছেলেমেয়ে, আর পঙ্গু হাবাটে ননন্দটার খ্যাট যা করার দিনে দিনেই চাদি সেরে রাখে। কিন্তু আজ ঘরে কিছুই ছিল না। আটটায় ছুটি পেয়ে নন্দ চাল আটা আলু পেঁয়াজ আর দু-তিন রকম মাছের খানিকটা লেজ-কঁটা নিয়ে ঘরে ফেরার পর চাদি রান্না শুরু করেছে। GNQ