পাতা:শান্তিলতা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাড়ির মোট বউট ছিল, ওই যে সুন্দর গান করে সেই মেয়েটা ছিল—আরও কত মেয়ে-বউ-গিামীবাল্পীরাও ছিল। এটা চেয়ে ওটা চেয়ে ছেলেমেয়েরা চোচামেচি জুড়েছিল। দক্ষিণের চালাটার বেড়াটার গায়ে কাঠের গরাদ বসানো ফোকরাটাতে মুখ রেখে রাসমণি চোঁচিয়ে বলে : --তোদের বাড়ির ছেলেমেয়েগুলো খাটাসের মতো চিল্লায়, চাদি। দিনভোর জ্বরে ছটফটয়ে মানুষটা একটু ঘুমিয়েছে, ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলে । পরমাশ্চর্য ব্যাপারই বটে যে, বদমেজাজী জাতকুঁদুলী চাদি তার শানানো তৈরী গলা যথাসাধ্য নরম করে জবাব দেয় ; --ছেলেপিলেরা একটু চিল্লায়। তা করা যায় কী বলে। ওদের চোঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেছে দক্ষিণের চালাটার পশ্চিমাংশের অধিবাসী দিবাকরের। সবাই জানে, কদিনের মধ্যে এমন ঘুম দেবে দিবাকর যে চারপাশে হাজার বোমা ফাটলেও সে ঘুম আর ভাঙবে না। রাসমণিও তা জানে। যুদ্ধফেরত জবরদস্ত সৈনিকটা রক্তবমি করে মরছে। টি. বি, নয়, পেটের মধ্যে কী পেন হয়েছে। উদ্ভট একটা ব্যাপার। যুদ্ধে গিয়ে আহত হয়েছিল, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল। কবে যুদ্ধ থেমে গেছে, এতদিন পরে বোমার টুকরোর আঘাতটা ঘনিয়ে উঠে ফাটিয়ে দিতে চাইছে তার দেহটা ৷ কাল দিবাকর হাসপাতালে যাবে। দুদিন ধরে চেষ্টা করে ব্যবস্থা করা গেছে । (8