পাতা:শারদোৎসব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মন্ত্রী। কবি বলেন, ওই ছেলেদের প্রাণের মধ্যেই তো আসল ছুটির চেহারা। তারা কাঁচাধানের খেতের মতোই নিজে না জেনে, কাউকে না জানিয়ে ছুটির ভিতরেই, ফসলের আয়োজন করছে।

 রাজা। তা ওই ছেলের দলকে ভালো করে শেখানো হয়েছে?

 মন্ত্রী। একেবারেই না।

 রাজা। কী সর্বনাশ! তা হলে—

 মন্ত্রী। কবি বলেন, বুড়োরা ছেলেদের যদি শেখাতে যায়, তা হলে তো ছেলেরা পেকে যাবে— ছেলেই থাকবে না। সেইজন্যে ওদের নাট্য শেখানোই হয় নি। কবি বলেন, সহজে খুশি হবার বিদ্যে ওদের কাছ থেকে আমরাই শিখব।

 রাজা। কিন্তু মন্ত্রী, সহজে খুশি হবার বিদ্যা তো পুরবাসীদের বিদ্যা নয়। এই-সব হালকা, এই-সব কাঁচা, এই-সব না-শেখা ব্যাপারের মূল্য কি তাঁদের কাছে আছে?

 মন্ত্রী। সে কথা আমি কবিকে জিজ্ঞাসা করেছিলুম—তিনি বললেন, ওজন যার কিছু নেই তার আবার মূল্য কিসের? হেমস্তের পাকা ধানেরই মূল্য আছে, ভাদ্রের কাঁচা খেতের আবার মূল্য কী। একটুখানি হাসি, একটুখানি খুশি, এই হলেই দেনাপাওনা চুকে যাবে।

 রাজা। আচ্ছা বেশ, শুম্ভ-নিশুম্ভ তা হলে এখন থাক্‌— আসুক ছেলের দল, আসুক সন্ন্যাসীবেশে রাজা। তা হলে কবিকে একবার ডেকে দাও-না, তার সঙ্গে একবার কথা কয়ে নিই।

 মন্ত্রী। তাঁকে ডাকব কী মহারাজ, তিনি নিজেই যে এই পালায় সাজছেন।

১০১