পাতা:শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিদ্যাসমবায়

এলাহাবাদ ইংরেজি-বাংলা স্কুলের কোনাে ছাত্রকে একদা এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল যে ‘রিভার্’ শব্দের সংজ্ঞা কী। মেধাবী বালক তাহার নির্ভুল উত্তর দিয়াছিল। তাহার পরে যখন তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল কোনােদিন সে কোনাে রিভার্ দেখিয়াছে কি না, তখন গঙ্গাযমুনার তীরে বসিয়া এই বালক বলিল যে, না, আমি দেখি নাই। অর্থাৎ, এই বালকের ধারণা হইয়াছিল, যাহা চেষ্টা করিয়া, কষ্ট করিয়া, বানান করিয়া, অভিধান ধরিয়া, পরের ভাষায় শেখা যায় তাহা আপন জিনিস নয়; তাহা বহুদূরবর্তী, অথবা তাহা কেবল পুঁথিলােক-ভুক্ত। এই ছেলে তাই নিজের জানা দেশটাকে মনে মনে জিয়ােগ্রাফি-বিদ্যা হইতে বাদ দিয়াছিল। অবশ্য, পরে এক সময়ে এ শিখিয়াছিল যে, যে দেশে তাহার জন্ম ও বাস সেও ভূগােলবিদ্যার সামগ্রী, সেও একটা দেশ, সেখানকার রিভার্‌ও রিভার্। কিন্তু মনে করা যাক, তার বিদ্যাচর্চার শেষ পর্যন্ত এই খবরটি সে পায় নাই—শেষ পর্যন্তই সে জানিয়াছে যে আর-সকল জাতিরই দেশ আছে, কেবল তারই দেশ নাই— তবে কেবল যে তার পক্ষে সমস্ত পৃথিবীর জিয়ােগ্রাফি অস্পষ্ট ও অসমাপ্ত থাকিয়া যাইবে তাহা নহে, তাহার মনটা অন্তরে অন্তরে গৃহহীন গৌরবহীন হইয়া রহিবে। অবশেষে বহুকাল পরে যখন কোনাে বিদেশী জিয়ােগ্রাফি-পণ্ডিত আসিয়া কথাচ্ছলে তাহাকে বলে যে ‘তােমাদের একটা প্রকাণ্ড বড়াে দেশ আছে, তার হিমালয় প্রকাণ্ড বড়াে পাহাড়, তার সিন্ধু ব্রহ্মপুত্র প্রকাণ্ড বড় নদী’, তখন হঠাৎ এই-সমস্ত খবরটায় তাহার মাথা ঘুরিয়া যায়; নূতন জ্ঞানটাকে সে সংযতভাবে বহন করিতে পারে না; অনেক কালের অগৌরবটাকে এক দিনে শােধ দিবার জন্য সে চীৎকারশব্দে চার দিকে বলিয়া বেড়ায়, ‘আর-সকলের দেশ দেশমাত্র, আমাদের দেশ স্বর্গ।’ একদিন যখন সে মাথা হেঁট করিয়া আওড়াইয়াছে যে ‘পৃথিবীতে আর-সকলেরই দেশ আছে, কেবল আমাদেরই নাই’ তখনাে বিশ্ব-