পাতা:শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শিক্ষার মিলন

এ কথা মানতেই হবে যে, আজকের দিনে পৃথিবীতে পশ্চিমের লােক জয়ী হয়েছে। পৃথিবীকে তারা কামধেনুর মতাে দোহন করছে, তাদের পাত্র ছাপিয়ে গেল। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছি, দিন দিন দেখছি আমাদের ভােগে অন্নের ভাগ কম পড়ে যাচ্ছে। ক্ষুধার তাপ বাড়তে থাকলে ক্রোধের তাপও বেড়ে ওঠে; মনে মনে ভাবি, যে মানুষটা খাচ্ছে ওটাকে একবার সুযােগমত পেলে হয়। কিন্তু ওটাকে পাব কি, ওইই আমাদের পেয়ে বসেছে; সুযােগ এপর্যন্ত ওরই হাতে আছে, আমাদের হাতে এসে পৌঁছয় নি।

 কিন্তু কেন এসে পৌছয় নি? বিশ্বকে ভােগ করবার অধিকার ওরা কেন পেয়েছে? নিশ্চয় সে কোনাে-একটা সত্যের জোরে। আমরা কোনাে উপায়ে দল বেঁধে বাইরে থেকে ওদের খােরাক বন্ধ ক’রে নিজের খােরাক বরাদ্দ করব, কথাটা এতই সােজা নয়। ড্রাইভারটার মাথায় বাড়ি দিলেই যে এঞ্জিনটা তখনই আমার বশে চলবে, এ কথা মনে করা ভুল। বস্তুত, ড্রাইভারের মূর্তি ধরে ওখানে একটা বিদ্যা এঞ্জিন চালাচ্ছে। অতএব, শুধু আমার রাগের আগুনে এঞ্জিন চলবে না, বিদ্যাটা দখল করা চাই— তা হলেই সত্যের বর পাব।

 মনে করো, এক বাপের দুই ছেলে। বাপ স্বয়ং মােটর হাঁকিয়ে চলেন। তাঁর ভাবখানা এই, ছেলেদের মধ্যে মােটর চালাতে যে শিখবে মােটর তারই হবে। ওর মধ্যে একটি চালাক ছেলে আছে, তার কৌতূহলের অন্ত নেই। সে তন্ন তন্ন করে দেখে গাড়ি চলে কী করে। অন্য ছেলেটি ভালােমানুষ, সে ভক্তিভরে বাপের পায়ের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে; তাঁর দুই হাত মােটরের হাল্ যে কোন্ দিকে কেমন করে ঘােরাচ্ছে তার দিকেও খেয়াল নেই। চালাক ছেলেটি মােটরের কলকারখানা পুরােপুরি শিখে নিলে এবং একদিন গাড়িখানা নিজের হাতে বাগিয়ে নিয়ে ঊর্ধ্বস্বরে বাঁশি বাজিয়ে দৌড় মারলে। গাড়ি চালাবার শখ দিন রাত এমনি তাকে পেয়ে বসল যে, বাপ