পাতা:শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার মিলন
২৩৩

শক্তিহীনতার প্রধান আড্ডা।

 পশ্চিমদেশে পােলিটিকাল স্বাতন্ত্র্যের যথার্থ বিকাশ হতে আরম্ভ হয়েছে কখন থেকে? অর্থাৎ, কখন থেকে দেশের সকল লােক এই কথা বুঝেছে যে, রাষ্ট্রনিয়ম ব্যক্তিবিশেষের বা সম্প্রদায়বিশেষের খেয়ালের জিনিস নয়, সেই নিয়মের সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের সম্মতির সম্বন্ধ আছে? যখন থেকে বিজ্ঞানের আলােচনায় তাদের মনকে ভয়মুক্ত করেছে। যখন থেকে তারা জেনেছে, সেই নিয়মই সত্য যে নিয়ম ব্যক্তিবিশেষের কল্পনার দ্বারা বিকৃত হয় না, খেয়ালের দ্বারা বিচলিত হয় না। বিপুলকায় রাশিয়া সুদীর্ঘকাল রাজার গােলামি করে এসেছে, তার দুঃখের আর অন্ত ছিল না। তার প্রধান কারণ, সেখানকার অধিকাংশ প্রজাই সকল বিষয়েই দৈবকে মেনেছে, নিজের বুদ্ধিকে মানে নি। আজ যদি-বা তার রাজা গেল, কাঁধের উপরে তখনই আর-এক উৎপাত চড়ে বসে তাকে রক্তসমুদ্র সাঁৎরিয়ে নিয়ে দুর্ভিক্ষের মরুডাঙায় আধমরা করে পৌঁছিয়ে দিলে। এর কারণ, স্বরাজের প্রতিষ্ঠা বাইরে নয়, যে আত্মবুদ্ধির প্রতি আস্থা আত্মশক্তির প্রধান অবলম্বন সেই আস্থার উপরে।

 আমি একদিন একটি গ্রামের উন্নতি করতে গিয়েছিলুম। গ্রামের লােকদের জিজ্ঞাসা করলুম, ‘সেদিন তােদের পাড়ায় আগুন লাগল, একখানা চালাও বাঁচাতে পারলি নে কেন?’ তারা বললে, ‘কপাল!’ আমি বললেম, ‘কপাল নয় রে, কুয়াের অভাব। পাড়ায় একখানা কুয়াে দিস নে কেন?’ তারা তখনই বললে, ‘আজ্ঞে, কর্তার ইচ্ছে হলেই হয়।’ যাদের ঘরে আগুন লাগাবার বেলায় থাকে দৈব তাদেরই জল দান করবার ভার কোনাে-একটি কর্তার। সুতরাং, যে করে হােক এরা একটা কর্তা পেলে বেঁচে যায়। তাই এদের কপালে আর-সকল অভাবই থাকে, কিন্তু কোনাে কালেই কর্তার অভাব হয় না।

বিশ্বরাজ্যে দেবতা আমাদের স্বরাজ দিয়ে বসে আছেন। অর্থাৎ, বিশ্বের নিয়মকে তিনি সাধারণের নিয়ম করে দিয়েছেন। এই নিয়মকে নিজের হাতে গ্রহণ করার দ্বারা আমরা প্রত্যেকে যে কর্তৃত্ব পেতে পারি তার থেকে কেবল-