পাতা:শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার মিলন
২৪৯

এ যে ঘর পর কিছুই বিচার করে না। এ যখন একদিন পূর্বদেশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোমল অংশ বেছে তাতে দাঁত বসিয়েছিল এবং ‘ভিক্ষু যথা ইক্ষু খায় ধরি ধরি চিবায় সমস্ত’— তখন মহাপ্রসাদের ভােজ খুব জমেছিল, সঙ্গে সঙ্গে মদমত্ততারও অবধি ছিল না। আজ মাথায় হাত দিয়ে ওদের কেউ কেউ ভাবছে, ‘এর পুজো আমাদের বংশে সইবে না।’ যুদ্ধ যখন পুরােদমে চলছিল তখন সকলেই ভাবছিল, যুদ্ধ মিটলেই অকল্যাণ মিটবে। যখন মিটল তখন দেখা গেল ঘুরে ফিরে সেই যুদ্ধটাই এসেছে সন্ধিপত্রের মুখােশ প’রে। কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে যার প্রকাণ্ড লেজটা দেখে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আঁৎকে উঠেছিল, আজ লঙ্কাকাণ্ডের গােড়ায় দেখি সেই লেজটার উপর মােড়কে মােড়কে সন্ধিপত্রের স্নেহসিক্ত কাগজ জড়ানাে চলেছে; বােঝা যাচ্ছে, ঐটাতে আগুন যখন ধরবে তখন কারাের ঘরের চাল আর বাকি থাকবে না। পশ্চিমের মনীষী লােকেরা ভীত হয়ে বলছেন যে, যে দুর্‌বুদ্ধি থেকে দুর্ঘটনার উৎপত্তি এত মারের পরেও তার নাড়ী বেশ তাজা আছে। এই দুর্‌বুদ্ধিরই নাম ন্যাশন্যালিজ্‌ম্‌, দেশের সর্বজনীন আত্মম্ভরিতা। এ হল রিপু, ঐক্যতত্ত্বের উল্টা দিকে অর্থাৎ আপনার দিকটাতেই এর টান। কিন্তু জাতিতে জাতিতে আজ একত্র হয়েছে এই কথাটা যখন অস্বীকার করবার জো নেই, এত বড়ো সত্যের উপর যখন কোনাে একটামাত্র প্রবল জাতি আপন সাম্রাজ্যরথ চালিয়ে দিয়ে চাকার তলায় একে ধুলাে ক’রে দিতে পারে না, তখন এর সঙ্গে সত্য ব্যবহার করতেই হবে। তখন ঐ রিপুটাকে এর মাঝখানে আনলে শকুনির মতো কপট দ্যুতের ডিপ্লমাসিতে বারে বারে সে কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে দেবে।

 বর্তমান যুগের সাধনার সঙ্গেই বর্তমান যুগের শিক্ষার সংগতি হওয়া চাই। রাষ্ট্রীয় গণ্ডী -দেবতার যারা পূজারি তারা শিক্ষার ভিতর দিয়ে নানা ছুতােয় জাতীয় আত্মম্ভরিতার চর্চা করাকে কর্তব্য মনে করে। জর্মনি একদা শিক্ষাব্যবস্থাকে তার রাষ্ট্রনৈতিক ভেদবুদ্ধির ক্রীতদাসী করেছিল ব’লে পশ্চিমের অন্যান্য নেশন তার নিন্দা করেছে। পশ্চিমের কোন্ বড় নেশন এ কাজ করে