পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাল্যে
২১

বিড়াল আমি ভাল বাসিতাম না। ফুলগাছেও আমার মন আকৃষ্ট হইত না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাখীর নেশা আমার কমিয়া আসিয়াছিল।

 দ্বিতীয়বার এক মৃত সন্তান প্রসবের সময় আমার মায়ের মৃত্যু হয়। আমার বয়স তখন দশ বৎসর। প্রাণে দারুণ আঘাত পাইলাম। মৃত্যু কি, তাহা তখন আমি বুঝিতাম। আমাকে কেহ মিথ্যা বাক্যে ভুলাইতে পারিল না―কেহ আমাকে সান্ত্বনার কথা বলিতে পারিল না। আমি চীৎকার করিয়া মাটিতে লুটাইয়া কাঁদিলাম। বাবা আমাকে কোলে তুলিয়া লইলেন। কিন্তু আমি ছিন্নশির ছাগশিশুর মত ছট্‌ফট্‌ করিতে করিতে বাবার কোল হইতে নামিলাম। প্রতিবেশীগণ মায়ের মৃত দেহ পালঙ্কের উপর পুষ্পমালায় সাজাইয়া কাঁধে করিয়া লইয়া গেল। আমি তাহাদের পশ্চাতে ছুটিয়া চলিলাম। আমার মনে আছে, কতকদূর যাইয়া ফুটপাতের উপর আছড়াইয়া পড়িয়াছিলাম। মুখ তুলিয়া সম্মুখে চাহিয়া দেখি, বাহকেরা দূরে চলিয়া গিয়াছে। পালঙ্কের পশ্চাদ্দিকে মায়ের আল্‌তা মাখান পা-দুখানি বাহির হইয়া রহিয়াছে; তাহাই আমার দৃষ্টি পথে।

 আজ আমার দুঃখময় জীবনের কাহিনী লিখিতে বসিয়া চক্ষুর জল ঝরিতেছে। কত দিন কত দুঃখে অশ্রু বিসর্জ্জন করিয়াছি―আমার মনে হইয়াছে, তাহা মায়ের সেই চরণযুগলে নিপতিত হইয়া তার শুষ্ক অলক্তক-রাগকে আরও উজ্জ্বল করিয়া তুলিয়াছে।

 মায়ের মৃত্যুতে বাবা খুব কাঁদিয়াছিলেন। তিন দিন পর্য্যন্ত তিনি কিছু আহার করেন নাই। অবশেষে বন্ধুদের সনির্ব্বন্ধ