পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

পরণে একখানা কাপড়ই যথাসর্ব্বস্ব— দুইবেলা আহার জুটে না— তার উপর অত্যাচার! আমি কালীদাসীর সহিত কথা কহিলাম না। মোহান্তজীর উপদেশ আমার মনে হইল— “দৈবকে অতিক্রম করিবার শক্তি কাহারও নাই। কর্ম্মফলই দৈব।”

 ঊষাবালার কথা এইখানেই বলিব। সে ফরিদপুরের কোন ব্রাহ্মণ উকিলের পরিণীতা স্ত্রী, পিত্রালয় হইতে কয়েকজন ধনী মুসলমান তাহাকে অপহরণ করিয়া কলিকাতার নিকটবর্ত্তী বেলিয়াঘাটায় রাখে। নারী-রক্ষা-সমিতির কর্ম্মী শ্রীযুক্ত মহেশচন্দ্র আতর্থী মহাশয় সংবাদ পাইয়া তাঁহার কর্ম্মীদের দ্বারা ও পুলিশের সাহায্যে ঊষাবালাকে উদ্ধার করেন। এইজন্য পুলিশ-আদালতে মামলা চলিতে থাকে। তাহার স্বামী তাহাকে স্ত্রী বলিয়া অস্বীকার করেন। ঊষাবালা কিছুদিন সঞ্জীবনী সম্পাদক, নারীরক্ষা সমিতির পরিচালক শ্রীযুক্ত কৃষ্ণকুমার মিত্র মহাশয়ের বাড়ীতে অবস্থান করে। এই উষাবালার কথাই আমি পূর্ব্বে একবার উল্লেখ করিয়াছি। সে আমার নিকট বলিয়াছে “কৃষ্ণকুমার মিত্র মহাশয় আমাকে নিজ কন্যার মত দেখতেন। তিনি আমাকে লেখাপড়া শিখাইবার ব্যবস্থা করলেন; শিল্প কাজ শিখবার জন্য এক স্কুলে ভর্ত্তী করে দিলেন। কিন্তু আমি কিছুতেই মনস্থির করতে পারলাম না। দুপ্রবৃত্তি দমন করা আমার পক্ষে অসাধ্য হয়ে উঠল। আমার বয়স আঠার বৎসরের বেশী— সুতরাং তাঁরা আমাকে আর জোর করে রাখতে পরেন না। নানা অবস্থার পাক চক্রে ঘুরে আমি এই পথে এসেছি। কিছু দিন আমাকে রাস্তায় বসে পান বিক্রীও করতে হ’য়েছিল।