পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

অনুরোধে খাদ্য গ্রহণ করিয়াছিলেন। বাবার শয়নগৃহের প্রাচীরে মায়ের একখানি বৃহৎ সিপিয়া রংএর ব্রোমাইড এনলার্জ্জমেণ্ট ছবি ছিল। আমার সপ্তম জন্মতিথিতে বাবা আমাকে উহা উপহার দিয়াছিলেন। সাড়ে সাত শত টাকা ব্যয়ে তিনি ঐ ছবিখানি বিলাত হইতে তৈয়ারী করাইয়া আনেন। মায়ের মৃত্যুর পর হইতে বাবা নিত্য এক ছড়া ফুলের মালা দিয়া ছবিখানিকে সাজাইতেন।

 মায়ের জীবদ্দশাতেই আমি বেথুন স্কুলে ভর্ত্তি হইয়াছিলাম। তাঁহার মৃত্যুকালে আমি ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। বাড়ীতে একজন গৃহ শিক্ষক আমাকে ও নন্দ দাদাকে পড়াইতেন। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আমাকে স্কুলে হইতে ছাড়াইয়া আনিলেন। বাড়ীতে অধিক সময় পড়াইবার জন্য একজন ভাল শিক্ষক নিযুক্ত হইলেন। আমাকে সর্ব্বদা কাছে কাছে রাখিয়া শোকবেগ কতকটা প্রশমিত করিবার জন্যই বোধ হয় বাবা এইরূপ ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। যাহা হউক ইহাতে আমার পড়াশুনার কোন ক্ষতি হইল না।

 ছয় মাস চলিয়া গেল। তখন বাংলাদেশে স্বদেশী আন্দোলনের অব্যবহিত পরেই বোমার গোলযোগ আরম্ভ হইয়াছে। নেতাদের নির্ব্বাসন, যুবকদের কারাদণ্ড, বিপ্লববাদীদের গ্রেপ্তার, বোমাওয়ালাদের ফাঁসী, এই সকল ভীষণ ব্যাপারে দেশময় একটা চাঞ্চল্য দেখা দিয়াছে। নানাস্থানে সভা সমিতি, লাঠিখেলার আখড়া প্রভৃতি স্থাপিত হইল। আমার পিতা এই আন্দোলনের মধ্যে ছিলেন। নন্দ দাদা আমাকে মাঝে মাঝে স্বদেশী সভায় লইয়া যাইতেন। সেখানে কত উত্তেজনাময় বক্তৃতা শুনিতাম।