পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

 নন্দ দাদার চেষ্টায় ছোরা খেলা শিখিয়াছিলাম। আমার ডান হাতে একটা বড় কাটার দাগ এখনও তার সাক্ষী। বাবার আদেশে ছোরা খেলা পরিত্যাগ করি। তার পরিবর্ত্তে গল্পের পুস্তক পড়ায় আমার মন আকৃষ্ট হইল। আমার গৃহশিক্ষক মহাশয় ইহাতে আমাকে বিশেষ উৎসাহ দিতেন।

 ‘দেবীচৌধুরাণী’ নাটক অভিনয় দেখিবার পর আমি বোধ হয় ‘ভ্রমর’ ও ‘কপালকুণ্ডলা’ দেখিয়াছিলাম। মাষ্টার মহাশয় একদিন আমাকে বলিলেন, বঙ্কিম বাবুর লেখা আসল বই না পড়্‌লে, রস ও সৌন্দর্য্য উপলব্ধি হয় না। আমাদের বাড়ীতে তিনটী আলমারী বোঝাই অনেক পুস্তক ছিল। মাষ্টার মহাশয় অনুসন্ধান করিয়া তাহার মধ্য হইতে বঙ্কিম বাবুর গ্রন্থাবলী বাহির করিয়া দিলেন। আমি দিবারাত্রি সেই উপন্যাস পাঠ করিতে লাগিলাম। সকল স্থানে বুঝিতে পারিতাম না। কিন্তু তথাপি প্রাণে কেমন একটা অপূর্ব্ব পুলকের সঞ্চার ইইত।

 আমাকে দেখাশুনা করিবার নিমিত্ত আমার বিধবা পিসিমা আসিয়াছিলেন। তিনি আমার পিতার জেষ্ঠ্যা ভগিনী। আমার যাহাতে কোন কিছুর অসুবিধা না ঘটে, সে বিষয়ে তিনি সর্ব্বদা দৃষ্টি রাখিতেন। একদিন আনি শুনিলাম, পিসিমা বাবাকে বলিতেছেন “হাঁরে খোকা এইত এক বৎসর প্রায় হ’য়ে এল। আর ত দেরী করা ভাল নয়। তোর শাস্ত্র জ্ঞান আছে—বংশ রক্ষা, পিতৃকুলের জলপিণ্ড, এসব তুই কি জানিস্ না।” আমি তখন ইহার অর্থ বুঝিতে পারি নাই।

 কিছুদিন পরে বাবা আমাকে পুনরায় বেথুন স্কুলে ভর্ত্তি করিয়া