পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

 আমাদের বাড়ীতে দু’বেলাই চা তৈরী হইত। পূর্ব্বে বাবার সঙ্গে বসিয়া চা খাওয়া আমার নিয়ম ছিল। আজকাল বাবার চায়ের পেয়ালা বিমাতা হাতে করিয়া নিতেন। বাবাও আমাকে কখন ডাকেন নাই; আমিও আর সেদিকে যাইতাম না। আমি মাষ্টার মহাশয় আসিবার পূর্ব্বেই আমার পড়িবার ঘরে একলা বসিয়া চা খাওয়া শেষ করিতাম।

 এখন মাষ্টার মহাশয় আমার চা পানের সঙ্গী হইলেন। সেই সময় আমাদের মধ্যে সামাজিক ও রাজনীতিক নানা কথাবার্ত্তা হইত। তখন দেশ-নেতাদের মহলে ‘আত্মশক্তির’ কথা উঠিয়াছে। মাষ্টার মহাশয় বলিলেন “মানু, আমাদের দেশের শাস্ত্রকারেরা সুখ দুঃখের আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন ‘সর্ব্বং আত্মবশং সুখং সর্ব্বং পরবশং দুঃখং।’ অন্নবস্ত্র ত দূরের কথা, সামান্য বিষয়ের জন্যও আমাদিগকে পরের উপর নির্ভর করতে হয়। এই দেখনা কেন, চাকর চা তৈয়ারী করিয়া না দিলে আমাদের চা খাওয়া হয়না; অথচ ইহা দুই মিনিটের কাজ। আমাদের সমাজে ও পরিবারে বিলাসিতা এত বেড়ে উঠেছে।”

 বাবাকে বলিয়া আমি একটী ছোট ইলেক্‌ট্রীক হিটার কিনিলাম। আমার পড়িবার ঘরে বিজ্‌লী বাতির প্লাগ্ ছিল। তাহার সাহায্যে আমি সহজে জল গরম করিবার ব্যবস্থা করিলাম। পরদিন মাষ্টার মহাশয় আসিলে যখন স্বহস্তে চা তৈয়ারী করিয়া তাঁহার সম্মুখে পেয়ালা ও প্লেট ধরিলাম, তখন তিনি আনন্দে হাত বাড়াইয়া বলিলেন “বাঃ, উপযুক্ত ক্ষেত্রে পড়্‌লে উপদেশের বীজ এমনি ফলপ্রদ বৃক্ষে পরিণত হয়।”