পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পলায়ন
৪৭

নিজের কোন নির্দ্দিষ্ট কাজ না থাকায় অপর সকলের কাজের উপর ওস্তাদি করিয়া বেড়াইত―আর খামাকা কথা তুলিয়া কেবলি গোলযোগ পাকাইত।

 আমার এই রকম চাল-চলন হরিমতি দুই চক্ষে দেখিতে পারিত না। সে প্রথমে বিমাতার নিকট আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করিল। কিন্তু বিমাতা আমার প্রায় সম-বয়সী, বিশেষতঃ মায়ের মত গাম্ভীর্য্য ও শাসন করিবার ক্ষমতা তাঁহার ছিল না। তিনি রুক্ষভাষিণী ও কোপন স্বভাব নহেন। সুতরাং তিনি আমায় কিছুই বলিলেন না। বিফল মনোরথ হইয়া হরিমতি বাবার কাছে গেল; কিন্তু সেখানেও কোন সুবিধা হইল না।

 অবশেষে সে নিজেই আমাকে শাসন করিতে আরম্ভ করিল। একদিন হরিমতি আমাকে বলিল “আচ্ছা, খুকুমণি এসব কি বলত! পাড়াময় লোকে ছিছি কচ্ছে। জ্ঞাতি ভাই আছে―মাষ্টার আছে, বেশ তাদের সঙ্গে সভ্য ভব্য হয়ে কথা কও―হাস্‌তে হাস্‌তে পুরুষের গায়ে ঢলে পড়া―গলাগলি হ’য়ে বেড়ান! তুমি সোমত্ত মেয়ে―বিয়ে হ’লে এদ্দিনে ছেলের মা হ’তে।”

 হরিমতি যাহা বলিয়াছিল তাহা মিথ্যা নয়, এজন্য আমি কোন উত্তর দিলাম না। মাথা নীচু করিয়া রহিলাম। ঝগড়া করা আমার স্বভাব নহে। বিশেষতঃ এক্ষেত্রে বাদ প্রতিবাদ আমার পক্ষে সুবিধাজনক হইবে না, তাহা আমি জানিতাম। ঘটনা যে পাড়াময় ছড়াইয়াছে, একথা হরিমতি আমাকে ভয় দেখাইবার জন্য বলিয়াছিল। তবে ইহাও আমি জানিতাম, যদি আমার কখনও বদ্‌নাম রটে, তবে তাহা হরিমতি দ্বারাই হইবে।