পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাপের পথে
৭৭

 আমি একটু সুস্থ হইলে তিনি আমাকে বলিলেন “মা, আমার এই আশ্রমে ত স্ত্রীলোক রাখবার নিয়ম নাই। বিশেষতঃ তুমি গর্ভবতী—সম্মুখে অনেক বিপদ। তুমি এখন কি করবে বল।” আমি কাঁদিয়া তাঁহার পা জড়াইয়া বলিলাম, “বাবা আমি মহাপাপী, আমায় উদ্ধার করুন। আপনি ত মনের কথা সবই জানেন।” মোহান্তজী বলিলেন “হাঁ, আমি সব জানি। তোমার মনের কথা তুমি যাহা না জান আমি তাহাও জানি। এই অনুতাপ ক্ষণস্থায়ী ও অপ্রকৃত। কামপ্রবৃত্তি একবার হৃদয়ের মধ্যে শিকড় গজাইয়া উঠিলে আর রক্ষা নাই। দুঃখ-দারিদ্র্য, রোগশোকে, সাময়িক বিচার-বুদ্ধিতে সেই পাপ বৃক্ষকে মাঝে মাঝে ছেদন করিয়া দেয়; কিন্তু আবার অনুকূল অবস্থায় নূতন অঙ্কুর জন্মে। একমাত্র ঈশ্বরের কৃপা ব্যতীত এই প্রলোভনকে স্থায়ীরূপে জয় করা যায় না। ইহার জন্য কঠোর সাধনার প্রয়োজন।”

 আমি অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বলিলাম “আমায় ক্ষমা করুন, আমায় আশ্রয় দিন।” মোহান্তজী স্নেহপূর্ণ স্বরে কহিলেন “মা, অন্নবস্ত্র দেওয়ার দয়া তুমি অনেক পা’বে। সেই দয়ার অভাব সংসারে নাই। তোমাকে এখন যে আক্রমণ করেছে সে দারিদ্র্য নহে— সে তোমার দুর্দ্দমনীয় প্রবৃত্তি। সেই আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার আশ্রয় ত তুমি চাওনা, তোমার প্রার্থনা অন্নবস্ত্র ও বাসগৃহ। আচ্ছা, তুমি ঘরে ফিরে যাবে?”

 আমি সম্মতি জানাইলে তিনি আমার পিতার নাম ঠিকানা লিখিয়া লইলেন। পরে শিষ্যকে ডাকিয়া বলিলেন “কলিকাতায় চিঠি লেখ। আশ্রমের পাশের বাগানে রামকিষণ তাহার স্ত্রী ও