পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

এসেছ কেন? এখন তোমার আসিবার কথা নয়!” আমি কিছু মাত্র ইতস্ততঃ না করিয়া তখনই উত্তর দিলাম, “শ্যামলী গাইয়ের বাছুরটা এইদিকে ছুটে এসেছে।” মোহান্তজী গম্ভীর স্বরে অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া বলিলেন “বাহিরে যাও– বাছুর এখানে আসেনি। এলেও সে রামকিষণের কাজ— তোমার নয়—”।

 পরদিনই মোহান্তজী আমাকে ডাকিলেন। আমি সভয়ে তাঁহার সম্মুখীন হইলাম। তাঁহার নিকটে আর একজন প্রৌঢ় বাঙ্গালী ভদ্রলোক বসিয়াছিলেন। মোহান্তজী আমাকে বলিলেন “তোমাকে আজই এই ভদ্রলোকটীর সঙ্গে কলিকাতায় যেতে হবে। সেখানে ইনি তোমার সকল ব্যবস্থা করে দিবেন।” আমি মনে মনে সুখী হইলাম।

 মোহান্তজী সাংসারিক জীবনে একজন উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি ছিলেন। সেই সূত্রে তাঁহার অনেক বন্ধু বৃন্দাবনে যাইয়া তাঁহার সহিত দেখা সাক্ষাৎ ও ধর্ম্মালোচনা করিতেন। যে ভদ্র লোকটার সঙ্গে আমি কলিকাতায় আসিলাম, তিনি মোহান্তজীর বন্ধু। তাঁহার গৃহে আমি প্রায় দশ দিন অবস্থান করি।

 কলিকাতা নগরের উপকণ্ঠে কোন স্থানে শ্রীযুক্ত— দাস একটী নারী— উদ্ধার-আশ্রম স্থাপন করিয়াছিলেন। তিনি একজন আইন ব্যবসায়ী। দেশকর্ম্মী বলিয়াও প্রসিদ্ধ। মোহান্তজীর বন্ধু সেই প্রৌঢ় ভদ্রলোকটী আমাকে নারী-উদ্ধার-আশ্রমে রাখিয়াছিলেন। শ্রীযুক্ত দাসের সহিত ইঁহার বিশেষ পরিচয় ছিল।

 আমার জীবনের ইতিহাসের এক অধ্যায় শেষ হইল। পিতার অনাদর, কুশিক্ষা ও কুসংসর্গ আমাকে পাপের পথে আনিয়াছে।