পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেহ বিক্রয়
৮৫

যাইতে পারে না। তাহাদের জীবনের গতি অস্থির। উদ্ধার আশ্রমে খাওয়া-পরা পাইয়াই যে তাহারা সুখী, আমার তাহা বোধ হইল না। ইহাদের সকলেই কিশোরী বা যুবতী। আমি যখন সেখানে গিয়াছিলাম, তখন প্রায় ১৩/১৪ জন স্ত্রীলোক ছিল, তন্মধ্যে জন পাঁচেক প্রৌঢ়া বিধবা ব্যতীত আর সকলেই এই শ্রেণীর।

 আমি ক্রমশঃ বুঝিতে পারিয়াছিলাম, যে সকল স্ত্রীলোক স্বেচ্ছায় অথবা কু-লোকের প্ররোচনায় ঘরের বাহির হইয়া আসে— অন্নবস্ত্রের অভাবই তাহাদের প্রধান বিপদ নহে। ‘কি খাইব’— এই চিন্তা অপেক্ষা ‘কি রূপে থাকিব’ এই ভাবনাই তাহাদের বেশী করিতে হয়। কলিকাতা সহরে স্ত্রীলোকেরা নানাপ্রকার ব্যবসায় ও চাকুরীতে নিযুক্ত হইতে পারে। তাহাতে গ্রাসাচ্ছাদনের উপযুক্ত অর্থ উপার্জ্জন করা যায়। কিন্তু আমি দেখিয়াছি ঐ সকল ব্যবসায় ও চাকুরী যে সকল স্ত্রীলোক অবলম্বন করিয়াছে তাহাদের মধ্যেও অনেকে প্রায় পতিতা নারীর পথে চলিতেছে। ইহার কারণ, তাহারা কখনও বিবাহিত জীবনের সংযমের মধ্য দিয়া ক্লাসে নাই। পানওয়ালী, মেস্ বোর্ডিং হোটেলের বা গৃহস্থ বাড়ীর ঝি চাকরাণী, বাজারের মাছ তরকারী ফল মূল প্রভৃতি বিক্রয়কারিণী, রাঁধুনি, কারখানার মজুরাণী, মশলা ঝাড়াই বাছাইওয়ালী, থিয়েটারের অভিনেত্রী, কীর্ত্তনওয়ালী, শুশ্রূষাকারিণী, সঙ্গীত-শিক্ষয়িত্রী, প্রসবকারিণী দাই, মেয়ে ডাক্তার, রেলের টিকিট আফিসে ও টেলিফোনের মেয়ে কেরাণী——ইহারা সকলেই স্বীয় জীবিকা নির্ব্বাহের উপযুক্ত অর্থ উপার্জ্জন করিতে পারে এবং ইচ্ছা করিলে পবিত্র জীবন যাপন করিতে পারে; কিন্তু