পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

দেখিব বলিয়া মনে বড়ই আনন্দ হইয়াছিল— কিন্তু সে আশা যে এরূপভাবে বিনষ্ট হইবে, তাহা কখনও মনে করি নাই। আমি মাথায় হাত দিয়া ভাবিতে লাগিলাম।

 মুকুলদার ঠিকানা ভুলিয়া গিয়াছিলাম। কমলার সন্ধান তাঁহার কাছে পাওয়া সম্ভব ছিল। আর কি উপায় আছে? রাজবালা বলিল “ভাই আজ রাত্রির মত আমি তোমাদিগকে একটা পরিচিত জায়গায় রাখিতে পারি। তারপর কাল সকালে যাহা হয় করা যাইবে।” আমরা অগত্যা সম্মত হইলাম। তখন রাত্রি অনেক হইয়াছে।

 সেই ঘোড়ার গাড়ীতে আরও বেশী ভাড়া দিয়া আমরা চাঁপাতলায় হাড়কাটা গলিতে এক পতিতা নারীর গৃহে আশ্রয় লইলাম। এই স্ত্রীলোকটী রাজবালার পূর্ব্ব জীবনের পরিচিতা। সে সমস্ত বাড়ীটা নিজে ভাড়া লইয়া তাহাতে ভিন্ন ভিন্ন ঘরে বেশ্যা ভাড়াটে বসাইয়াছিল। তাহাতে তাহার কিছু লাভ হইত। এতদ্ভিন্ন পাপ ব্যবসায়ে উপার্জ্জন ছিল। এই প্রকার স্ত্রীলোককে পতিতা নারী সমাজে ‘বাড়ীওয়ালী’ নামে অভিহিত করা হয়। ইহাকে সকলে রাণী বাড়ীওয়ালী বলিয়া ডাকিত।

 রাজবালাকে অনেকদিন পরে পাইয়া, বিশেষতঃ তাহার সঙ্গে আমাদের তিনজনকে দেখিয়া বাড়ীওয়ালী অতিশয় আনন্দিত হইল। সে পরম যত্নের সহিত আমাদের সকলকে একটী ঘরে থাকিতে দিল, তাহাতে বিছানা পত্রেরও অভাব ছিল না। আমাদের কিছু খাবার ব্যবস্থাও হইল। রাজবালার সহিত বাড়ীওয়ালী নানা কথাবার্ত্তা বলিতে আরম্ভ করিল।