পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

ঔষধ আমাকে দিয়াছিলেন। চিকিৎসাতেও তাঁহার অসাধারণ নৈপুণ্য ছিল। তাঁহার মত একজন চিকিৎসককে এত বেশী টাকা দর্শনী দিয়া আনন আমার পক্ষে অসম্ভব। তিনি যেদিন দুই তিন ঘণ্টা আমার ঘরে বসিতেন, সে দিন আমাকে দশ বিশ টাকা দিতেন। কখনও কখনও সন্ধ্যার পরে আমাকে মোটরে লইয়া বেড়াইতে বাহির হইতেন— গ্রাণ্ড হোটেল, গঙ্গার ধারে অথবা ইডেন গার্ডেনে বেড়াইয়া আমরা অধিক রাত্রিতে বাড়ী ফিরিতাম, সেদিন আমি ৫০ টাকা পাইতাম। তাঁহার অনুগ্রহে আমার মাসে প্রায় দুইশত টাকা উপার্জ্জন হইত।

 রাণী-মাসী আমাকে সাবধান করিয়া বলিল “মা, রোজগার যা পার এইবেলা করে নাও। শেষ বয়সের কথা মনে রেখো। এখন থেকে কিছু না জমাতে পারলে ভবিষ্যৎ জীবনে কষ্ট পাবে। দেখছে ত-এপথে বন্ধু-বান্ধব কেহই নাই। একমাত্র টাকাই সব।” আমি এই চিকিৎসক মহাশয়ের অনুগ্রহ পাইয়া অন্যদিকে রোজগারে একটু ঢিলা দিয়াছিলাম। রাণীমাসী বুঝিয়াছিল, এই বাবু চিরদিন থাকিবেন না। তার অনুমান মিথ্যা হয় নাই।

 সেই বৎসর আশ্বিন মাসে পূর্ব্ববঙ্গে ভীষণ ঝড় তুফান হয়! তাহাতে বহুলোকের প্রাণনাশ ঘটে। লোকের ঘর বাড়ী, বাগান শস্যক্ষেত্র সমস্ত নষ্ট হইয়া যায়। তাহাদের দুর্দ্দশা মোচনের জন্য কলিকাতায় এক সাহায্য ভাণ্ডার খোলা হয়। বিখ্যাত ব্যারিষ্টার ব্যোমকেশ চক্রবর্ত্তী ও চিত্তরঞ্জন দাশ (উভয়েই এখন পরলোকে) এই সংকার্য্যে অগ্রণী হ’ন। তাঁহাদের চেষ্টায় বহু সহস্র টাকা সংগৃহীত হইতে থাকে। যুবকেরা রাস্তায় রাস্তায় গান গাহিয়া