পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9 о শিখ-ইতিহাস তিনি বেলোলপুর সহরে পৌঁছিলেন। এখানে আসিয়া গুরু ইসলাম ধর্মের তৃতীয় প্রচারক পীর মহম্মদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিয়া, তাহার নিকট অবস্থিতি করিতে লাগিলেন । কথিত হয়,—গুরু এক সময়ে পীর মহম্মদের নিকট কোরাণ পাঠ করিয়াছিলেন । এই স্থানে গোবিন্দ মুসলমানদিগের অন্ন ভোজন করিয়াছিলেন ;—আপৎকালে মুসলমানের অন্ন গ্রহণ দুষণীয় নহে বলিয়া প্রচার করিয়াছিলেন। অতঃপর নীল বর্ণ পরিচ্ছদ পরিধান করত: মুসলমান দরবেশের ন্যায় গোবিন্দ ছদ্মবেশে ভাতিন্দার পার্বত্য উপত্যকায় পৌছিলেন। শিষ্যগণ পুনরায় তাহার নিকট সমবেত হইল ; তাঁহাদের সাহায্যে অনুসরণকারিগণকে বিদূরিত করিতে সমর্থ হইলেন । তদবধি সেই স্থান ‘মুকতসর অর্থাৎ ‘মুক্তি-সরোবর’ নামে অভিহিত। গোবিন্দ পলায়ন করিয়া হান্সি ও ফিরোজপুরের মধ্য-পথবর্তী দামদাম্মা বা "বিশ্রাম স্থান পর্যন্ত গিয়াছিলেন। তখন বাদসাহের কম চারিগণ মনে করিলেন,–গোবিন্দের সৈন্য এবং ক্ষমতা যথেষ্ট্ররূপে হ্রাস হইয়াছে। সেই বিশ্বাসে র্তাহারা বন্ধুর মরুময় প্রদেশে আর অধিক দূর গেবিন্দের অমুসরণ করিলেন না । গোবিন্দ দমদম্মায় কিছুকাল অবস্থান করিলেন ; এই স্থানে শিষ্যগণের শক্তির পুনরুদ্দীপন এবং ধম"মুরক্ত শিষ্যদিগের মুক্তির আশা প্রদানের জন্য দশম-রাজার-গ্রন্থ’ নামক গ্রন্থের ক্রোড়পত্র প্রণয়নে ব্যপৃত হন। বিচিত্র নাটুক’ বা ‘অত্যাশ্চর্য গল্পসমূহ ইহারই অন্তনিবিষ্ট। ‘বিচিত্র নাটুক" উভয় গ্রন্থেরই ঐতিহাসিক অংশ। যে জগদীশ্বর পূর্বাপর তাহার সহায়তা করিয়াছেন, সেই সর্বশক্তিমানের স্তোত্রে এই গ্রন্থের উপসংহার হইয়াছে । গোবিন্দ বলিয়াছেন,—তিনি যে সকল কার্য সম্পন্ন করিয়াছেন, তাহা স্বতন্ত্র গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হইবে । তিনি যে ঈশ্বরের সাক্ষাৎকার লাভ করিয়াছেন, তাহার মহিমা, এবং পূর্বজন্ম সমন্ধে তাহার স্মৃতি ও কল্পনা সকলই তাঁহাতে যোজিত হইবে। তিনি বলিলেন,—তিনি যে সকল কার্য করিয়াছেন", সে সকলই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সাহায্যে সম্পন্ন হইয়াছে —‘লৌ’ বা লৌহ তরবারি ঐশ্বরিক ক্ষমতাতেই তাহার প্রাণরক্ষা হইয়াছে। যখন গোবিন্দ এইরূপে নির্জনে বাস করিতেছিলেন, তখন জনৈক দূত আসিয়া তাহাকে বাদসাহের নিকটে উপস্থিত হওয়ার অদেশ জ্ঞাপন করে। কিন্তু তিনি রাজার প্রতি ভৎসনা-স্বচক কতকগুলি গল্পে আরঙ্গজেবের আদেশের প্রত্যুত্তর প্রদান করেন। এই সকল গল্পে ও র্তাহার প্রেরিত পত্রে, বাদসাহের নিকট বিনীত না হইয়া বরং তাহার ক্রোধ বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। তিনি বাদসাহের কোপ শাস্তির চেষ্টা করেন নাই ; বরং বাদসাহের প্রতি ঈশ্বর কুপিত,—ইহাই বলিয়া বাদসাহকে ভয় প্রদর্শন করিয়াছিলেন। তিনি সম্রাটকে বলিয়া পাঠাইয়াছিলেন, –বাদসাহের প্রতি তাহার বিশ্বাস নাই ; ‘খালসা" এখনও বাদসাহের কু-কার্যের প্রতিশোধ লইতে প্রস্তুত আছে । তিনি নামক-প্রবর্তিত ধর্য-রীতির বিষয় উত্থাপন করেন ; অর্জন ও তেগ বাহাদুরের মৃত্যুকাহিনীও সংক্ষেপে স্মরণ করাইয়া দেন। তাহার প্রতি যে অন্যায় ব্যবহার করা হইয়াছে,