পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( vii) ১৮৪৬ ) এৱং সোব্রাওন ( ১০ই ফেব্রুয়ারী ১৮৪৬)-এর চারটি যুদ্ধে প্রধানত শিখসেনাপতিদের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে শিখেরা সম্পূর্ণরূপে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হল। শেষ যুদ্ধে বিজয়ী ব্রিটিশদের অধিনায়কত্ব দেন গভর্ণর-জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ। নতুন চুক্তি সম্পাদিত হল। এই লাহোর চুক্তির জন্য শতদ্রু নদীর তীরবর্তী সমস্ত রাজ্যকে ইংরেজের হাতে তুলে দিতে হল। দিতে হল শতদ্রু ও বিপাশার মধ্যবর্তী জলন্ধর দোয়াব অঞ্চলকেও। আরও দিতে হল পঞ্চাশ লক্ষ মূদ্রা। জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য এককোটি টাকা চাওয়া হলে শিখদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হল না। ঐ পরিমণে টাকার বিনিময়ে তখন কাশ্মীর বিক্রি হয়ে গেল গোলাপ সিংহের ( জম্মুর রাজ্যপাল ) কাছে। শিখের সামরিক শক্তি মাত্র বিশ হাজার পদাতিক এবং বারে হাজার আশ্বারোহীতে হ্রাস ঘটানো হল । বছর না ঘুরতেই আবার ইংরেজ এই লাহোর চুক্তি সংশোধনে তৎপর হল যাতে আরও আট বছর ব্রিটিশ সৈন্য উপদ্রুত অঞ্চলে থাকতে পায় । রেসিডেপ্ট হেনরি লরেন্স council of Regency-এর সভাপতি হলেন । শিখ নেতারা এই চুক্তি খুবই অসম্মানজনক ভাবতে লাগলেন। মূলতানে বসানো হল দুজন নামকে ওয়াস্তে শিখ উত্তরাধিকারকে। দুজন ব্রিটিশ অফিসার গেলেন তাদের তত্বাবধানে। কিন্তু এপ্রিল ১৮৪৮-এ তাদের হত্যা করা হল । ইংরেজ ভাবলেন এটা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ স্বরূপ । অতএব তারা মুলতানের অধিকার গ্রহণ করলেন। দ্বিতীয় শিখযুদ্ধও ছিল স্বল্পস্থায়ী। এই যুদ্ধে শিখেরা পুনশ্চ সংঘবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন ১৩ই জানুয়ারী ১৮৪১ তারিখে। যুদ্ধ হল চিলিয়ানওয়ালা নামক একটি স্থানে। প্রচণ্ড যুদ্ধ করেও শিখেরা ( আফগানদের সহায়তায় ) ২১শে ফেব্রুয়ারী তারিখে সম্পূর্ণ পরাস্ত হল। এবার তাদের মেনে নিতে হল ব্রিটিশের সার্বভৌম প্রভুত্ব । এদিকে দলীপ সিংহ ও রাজমাতা জিন্দ কাউর ব্রিটিশের বেতনভোগী মাত্র হয়ে পড়েছেন । দলীপকে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় ফভগড়ে জন লগিনের তত্ত্বাবধানে স্থানান্তরিত করা হল । দলীপ, কেন জানিনা, খৃষ্টধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। মার্চ ১৮৫৩ খ্ৰীষ্টাব্দে তিনি খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। ব্রিটিশ সরকার পরের বছরে তাকে ইংল্যাণ্ডে পাঠিয়ে দিলেন । পুনশ্চ তার মধ্যে দেশপ্রেম জেগে উঠল এবং পুনরায় রাজ্য ফিরে পাবার মানসে সরকার বাহাদুরের কাছে আবেদন জানালেন । আবেদন পূরণ হল না। হতাশ দলীপ সিং ক্ষোভে ইংল্যাণ্ড ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্চ ১৮৯৬-তে ভারতের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন । কিন্তু এডেনে তাকে আটক করে বলা হল ভারতের পথে তার যাওয়া নিষেধ। অতএব তিনি পারী নগরে গেলেন। খৃষ্টধর্ম ত্যাগ করলেন এবং পুনর্বার শিখধর্মকে বরণ করে নিলেন। রাজ্য প্রাপ্তির জন্য দৃঢসংকল্প হয়ে তিনি ফরাসী সরকারের সহায়তা প্রার্থনা করে হতাশ হলেন। রাশিয়া অবশু তার ইচ্ছা কতকাংশে সমর্থন করলেন । সংবাদপত্রে রচনার দ্বারা ভারতীয় জনমত সংগঠনের চেষ্টাও তিনি করলেন। কিন্তু সফলকাম না হয়ে পারতেই মৃত্যুমুখে পতিত হন ( ১৮৯৩)।