পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইংরাজদিগের সহিত যুদ্ধ טס" উপনীত হইল, তখন শিখগণ সমূহ বিপদ উপলব্ধি করিতে পারিল ; শিখসৈন্যের শিবির হইতে ঘোর অর্তনাদ উপস্থিত হইল। এতৎসত্ত্বেও তাহারা সকলেই যুদ্ধার্থ অস্ত্রশস্ত্রে স্থসজ্জিত হইতে লাগিল । স্বর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইংরাজপক্ষ অগ্নিবর্ষণ আরম্ভ করিলেন ; বিপক্ষ দলের অধিকাংশ সৈন্যের উপর অনুন তিন ঘণ্টা ধরিয়া অনবরত অগ্নিবৃষ্টি হইল। ঘূর্ণিত গোলার প্রচণ্ড আঘাতে শকটগুলি চুর্ণ বিচুর্ণ হইতে লাগিল ; রাশি রাশি বালুক-তৃপ বিধ্বস্ত হইয়া বাতাসের সহিত অনন্ত আকাশে মিশিয়া গেল ; শূন্যগর্ভ গোলা-সমূহ শিখসৈন্যের সম্মুখভাগে নিপতিত হইয়া বিদীর্ণ হইতে লাগিল ; তদভ্যস্তরস্থিত সাংঘাতিক অস্ত্র-শস্ত্র শিখসৈন্যের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়ায়, শিখ-সৈন্য বিপর্যস্ত হইতে লাগিল । লক্ষ্যভ্রষ্ট রকেট’ ( হাউয়াই বাজীর ন্যায় অস্ত্রবিশেষ) অস্ত্র ভীমবেগে শূন্যমার্গে উড্ডীন হইয়া, সশস্বে সৈন্য-স্রোতের মধ্যে নিপতিত হইতে আরম্ভ করিল। কিন্তু ইংরাজ-পক্ষের এত চেষ্টা, এত উদ্যম সকলই নিষ্ফল হইল ; শিখগণ কিছুতেই নিরুৎসাহিত কিংবা ভীত, বিচলিত হইল না । তাহারা অস্ত্রাঘাতের পরিবর্তে অস্ত্রাঘাত করিতে লাগিল ; অগ্নির বিনিময়ে অগ্নিবর্ষণ করিতে আরম্ভ করিল। স্ব-সজ্জিত সৈন্য শ্রেণীর অস্ত্রসমূহের বিদ্যুৎঝলকে যুদ্ধক্ষেত্র উজ্জ্বলভাব ধারণ করিয়াছিল। সে দৃপ্ত কি মনোহর। গন্ধকময় ধুমরাশি উত্থিত হইয়া, কখনও সৈন্যগণকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিতেছিল ; কখনও বা উজ্জলতর লৌহতরবারির বজ্র-কঠোর তীক্ষু রশ্মিতে এবং খরপ্রভা পিতল-নিমিত আসিকোষ ও বর্মের অসাধারণ চাকচিক্যে চক্ষু কলসিয়া যাইতেছিল ;–সৈন্যগণের মুখমণ্ডল উজ্জল হইতে উজ্জলতরভাব ধারণ করিতেছিল। গুরুভাৱ কামান সমূহের গভীর গর্জন এবং ঘোর প্রতিধ্বনিতে সেই মনোমুগ্ধকর দৃপ্তের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি হইতেছিল। জয়েছু কষ্টসহিষ্ণু সৈনিকপুরুষদিগের কর্ণকুহরে সেই ধ্বনি প্রবিষ্ট হইয়া, তাহাঁদের হৃদয়ে উৎসাহ আরও বাড়িতে লাগিল। কিন্তু স্বর্যদেব যতই আপন পথে অগ্রসর হইতে লাগিলেন, বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইংরাজ পক্ষের সকলেরই প্রতীত হইল যে, বহুদুরবর্তী স্থান হইতে অনির্দিষ্টভাবে অগ্নিবর্ষণ করিলে, কোনই স্বফল ফলিবে না ; কেবল নিরবিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধই চলিতে থাকিবে । স্বতরাং যুদ্ধে জয়লাভ করিতে হইলে, সন্মুখ-সমর-কুশল বীরহায় পদাতিক সৈন্তের আক্রমণই এস্থলে বিশেষ কার্যকরী হইবে। অতএব কিছু কালের জন্য অগ্নিবর্ষণ নিবৃত্ত হইল ; প্রত্যেক যোদ্ধাই ভাবী যুদ্ধের জন্য স্থসজ্জিত হইতে লাগিল । বৃটিশ-সৈন্তের অস্তরে এক তেজঃগর্বশালিনী মহাশক্তি স্বতঃই জাগ্রত হইয়াছিল ; যে শক্তি তাঁহাদের মনে উৎসাহের ও আশার আলোক প্রদান করিয়াছিল, তাহাম্বের ক্ষীণপ্রভ রক্তায়তলোচন এবং অস্ত্ৰধারণে দৃঢ়মুষ্টিই সেই তেজঃশক্তির প্রশ্লষ্ট নিদর্শন । বৃটিশ সৈন্তের বামপার্শ্বস্ব সৈন্যদল যুগ্মপ্রথা অনুসারে অতি স্বছন্দ পদবিক্ষেপে অগ্রসর হইল। কিন্তু ইংরাজপক্ষ প্রথমেই এক ভুল করিয়া বসিলেন । সৈন্যদলের অধিনায়কগণ প্রত্যেক সৈন্যদলকে শ্রেণীবদ্ধভাবে দাড় না করাইয়, তাহার সৈন্ত-ব্যুহ রচনা করিয়াছিলেন ; স্বতরাং ইংরাজসৈন্ত, শিখসৈন্ধের সমকক্ষ হইতে পারিল না ; এরূপ আক্রমণে २३