পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. Obro শিখ-ই তিহাস পরিচালিত হইতে লাগিল। কিন্তু কিয়দুর অগ্রসর হইয়াই, তাহার পূর্বের বিশ্বাস দূর হইল। তিনি পূর্বে অকুমান করিয়াছিলেন,—শের সিংহ ছত্রভঙ্গ হইয়া, পলায়ন করিয়াছেন ; অনায়াসেই তাঁহাকে বিপর্যন্ত করা যাইবে । কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাহার বিপরীত ব্যাপার প্রত্যক্ষীভূত হইল। ১৮৪৯ খ্ৰীষ্টাব্দের ১২ই জানুয়ারী ডিঙ্গী নামক স্থানে উপনীত হইয়া, লর্ড গাফ, জানিতে পারিলেন, শের সিংহ সমস্ত সৈন্য সহ সেই প্রদেশেই অবস্থিতি করিতেছেন। লোসিয়ানওয়ালা গ্রামে শের সিংহের প্রধান সৈন্যদল শিবির সন্নিবেশ করিয়াছিল ; তাহার প্রধান সৈন্যদল দক্ষিণ পার্থে লক্ষ্মীওয়ালা এবং ফতেসাকেচক গ্রীমদ্বয়ে কতক সৈন্য, এবং বামপার্থে বিতস্তা নদীর তীরে রকুল নামক স্থানে আরও কতকগুলি সৈন্য অবস্থান করিতেছিল। এই ভাবে একটি গিরিসঙ্কটের দক্ষিণ সীমান্ত অধিকার করিয়া, দৃঢ়তার সহিত শের সিংহ সৈন্য সমাবেশ করিয়া ছিলেন। লর্ড গাফ, দেখিলেন, সে অবস্থায় শের সিংহের সৈন্যদলকে আক্রমণ করা দুরূহ ব্যাপার; সেরূপ উপায় অবলম্বন করিতে গেলে, সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। স্বতরাং তিনি মনস্থ করিলেন,—রস্থলের দিকে অগ্রসর হইয়া প্রথমত: বিপক্ষ সৈন্যের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করিবেন। এই অবস্থায় ১৩ই জঙ্কিয়ারী রাত্রিকালে ঘোর সমরানল প্ৰজলিত হইল। ইংরেজ-পক্ষ শিবির স্থাপন করিয়া কৌশলে শের সিংহের সৈন্য-দলকে পরাজিত করিবার উপায় অন্বেষণ করিতেছিলেন ; ইতিমধ্যে শিখগণ গোলাবর্ষণ আরম্ভ করিয়া দিল । বল বাহুল্য, ইংরেজপক্ষও সে ক্ষেত্রে হীনবল ছিলেন না । সুতরাং শিখগণকে গোল চালাইতে দেখিয়া, প্রধান সেনাপতি লর্ড গাফ, ইংরেজ পক্ষকেও যুদ্ধারম্ভ করিতে আদেশ প্রদান করিলেন । ব্রিগেডিয়ার পোপের অশ্বারোহী সৈন্যদলের সহিত সার ওয়ান্টার গিলবার্টের সৈন্যদল মিলিত হইয়া দক্ষিণ দিক হইতে শিখগণকে আক্রমণের চেষ্টা করিল। লেফটেনাণ্ট কর্ণেল গ্রান্টের পরিচালিত তিনদল গোলন্দাজ সৈন্য অন্য দিক দিয়া অগ্রসর হইল। ব্রিগেডিয়ার হোয়াইটের অশ্বারোহী সৈন্যদল, লেফটনাণ্ট-কর্ণেল ব্রায়েণ্ডের তিন দল গোলন্দাজ সৈন্য এবং বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ক্যাম্বেলের সৈন্যদল একত্র সম্মিলিত হইয়া বামপাশ্ব দিয়া প্রধাবিত হইল। মধ্যস্থলে কতকগুলি স্ববৃহৎ কামান সজ্জিত রহিল। ১৬ই জানুয়ারী ঘোর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। প্রথম এক ঘণ্টা কাল গোলাবর্ষণে ইংরেজগণ মনে করিলেন, বুঝি বা শের সিংহের সৈন্যদল নিমূল হইল। কিন্তু সে বিশ্বাস ভ্রমসঞ্ছল। শিখগণ এরূপ দৃঢ়তার সহিত যুদ্ধ করিল যে, বিপুল বৃটিশ-বাহিনী অলক্ষণ মধ্যেই বিপর্যন্ত হইয়া পড়িল ; ইংরেজ সেনানায়ক লেফটেনাণ্ট কর্ণেল ব্রুকস শিখসৈত্তের গোলার আঘাতে প্রাণত্যাগ করিলেন । ইহার পর, একদল শিখ পদাতিক আসিয়া, ইংরেজ-পক্ষের উপর ভীষণ গোলাবর্ষণ আরম্ভ করিল। সে আক্রমণ বড়ই সাংঘাতিক মনে হওয়ায়, ইংরেজপক্ষ পৃষ্ঠ-প্রদর্শনের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার পেনিকুইক এবং অপর তিন জন প্রধান সৈনিক পুরুষ নিহত হইলেন। যুদ্ধ যতই চলিতে লাগিল, ইংরেজ-পক্ষ ততই বিপর্যন্ত হইয়া পড়িলেন।