পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3brも শিখ-ইতিহাস মেজর জেনারেল জিলবার্টের অধীনে পদাতিক সৈন্যদল এবং ১৮টি বৃহৎ কামান সহ মেজের ডে ও হর্সফোর্ড অগ্রসর হইলেন । মেজর জেনারেল হুইশ, ব্রিগেডিয়ার মাথমি প্রভৃতির পরিচালিত সৈন্যদল তাহীদের সঙ্গে সঙ্গে প্রধাবিত হইল। মেজর ফরবেস, কাপ্তেন মেকাঞ্জি এবং এণ্ডারসনের সৈন্যদল, কাপ্তেন ডসের অধীনে পরিচালিত হইতে লাগিল। লেফটনাণ্ট কর্ণেল ব্রায়াও এবং মারসার প্রভৃতি আরও বহু সেনাপতির পরিচালিত বহু সৈন্যদল, বহু দিক হইতে সমবেত হইল। সকল দলের আর কত নাম করিব ?— যেন সপ্তরধীতে অভিমত্যুকে বেষ্টন করিয়া দাড়াইল । ফলত:, ভারতে ইংরেজের যেখানে যত সৈন্যদল ছিল, সকলেই যেন এই ক্ষেত্রে সমবেত হইল । শিখগণের ৫৯টি মাত্র কামান ছিল ; ইংরেজ পক্ষে শতাধিক বৃহৎ কামান এবং অসংখ্য ক্ষুদ্র কমান আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল। ২২শে ফেব্রুয়ারী সাড়ে সাতটার সময় যুদ্ধ আরম্ভ হইল। শিখগণ প্রথমে অসীম বীরত্ব প্রদর্শন বরিল ; কিন্তু পরিশেষে তাহীদের শক্তিতে আর কুলাইতে পারিল না । তাহীদের গোলাবারুদ ফুরাইয়া আসিল ; এদিকে ইংরেজ-পক্ষ প্রবল বেগে আক্রমণ করিবার জন্য অগ্রসর হইল। তখন আর উপায়াস্তর নাই দেখিয়া, শিখ-সৈন্য পলায়নের পথ ত তুসন্ধান করিতে লাগিল। ইতিমধ্যে ইংরেজ-পক্ষের পদাতিক সৈন্যগণ দ্রুতবেগে শিখ-শিবিরের উপর পতিত হইল। এইবার আর পারিল না ; শিখগণ আর আত্মরক্ষায় সমর্থ ইইল না । ইংরেজপক্ষ এইবার শিখদিগের কামানগুলি কাড়িয়া লইল ; শিখ-শিবির লুণ্ঠন করিল ; শিখদিগের যে কেহ সম্মুখে পড়িল, সে-ই অস্ত্রাঘাতে মৃত্যুমুখে পতিত হইল। এই যুদ্ধের গোলাবর্ষণে পাশ্ববর্তী গ্রামসমূহও বিধ্বস্ত হইয়া গেল। পলায়নের সময়ে, শিখসৈন্যের পশ্চাদমুসরণ করিয়া, পূর্বে দিকে ব্রিগেডিয়ায় জেনারেল ক্যাম্বেলের সৈন্যদল এবং পশ্চিমের দিকে বোম্বের সৈন্যদল প্রধাবিত হইল। এইরূপে প্রায় ১২ মাইল পথ ইংরেজ সৈন্য শিখদিগের অমুসরণে উধাও হইয়া ছুটিল । সমস্ত পথ হতাহতে পরিপূর্ণ ; চারিদিকে অস্ত্ৰ-শস্ত্র বিক্ষিপ্ত ; যেদিকে দৃষ্টিপাত করিবে, সেই দিকেই যেন শ্মশানের বিকট দৃপ্ত প্রতিফলিত। এই যুদ্ধের পরিণামে, অনেক নির্দোষ নিরীহ প্রাণীও যে বিপন্ন ইইল, তাহ বলাই বাহুল্য। যাহাঁদের হস্তে অস্ত্র-শস্ত্র ছিল না, তাহারাও অস্ত্রশস্ত্র লুকাইয়া রাখিয়াছে বলিয়া সন্দেহে দণ্ডিত হইতে লাগিল। এই যুদ্ধে শিখদিগের ৫৩টি কামান ইংরেজদিগের হস্তগত হয়। হতাহতের সংখ্যা,—সে আর কে নির্ণয় করিবে । এই যুদ্ধে ধরণী নরশোণিতস্রাবে প্লাবিত হইয়াছিলেন। ইংরেজের ইতিহাসেই প্রকাশ,- এই যুদ্ধে শিখপক্ষের ক্ষতির অবধি ছিল না ; কিন্তু ইংরেজ পক্ষের মাত্র ১২ জন নিহত এবং ৬৮২ জন আহত হইয়াছিল। স্বতরাং ইংরেজের আনন্দের আর পরিসীমা রহিঙ্গ না । স্বয়ং গবর্ণর-জেনারেল লর্ড ডা হাউসি এই যুদ্ধ জয়ে যে আনন্দ প্রকাশ করিয়াছিলেন, সে অনন্দের প্রতিধ্বনি আজিও যেন কর্ণে" কর্ণে ধ্বনিত হইতেছে। ভারত-ইতিহাসে এমন যুদ্ধ ইংরেজকে আর কখনও করিতে হয় নাই; ভারতবর্ষে ইংরেজের যত কিছু শক্তি-সামর্থ ছিল, সকলই এই যুদ্ধে নিয়োজিত হইয়াছিল ;–স্বয়ং গবর্ণর জেনারেল লর্ড ডালহাউলির মুখেই এই কথা প্রকাশ ।