পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজী ও আওরংজীবের সাক্ষাৎ
১০৩

তাঁহার বিজাপুর-আক্রমণ ব্যর্থ হইয়াছে; তাহাতে বাদশাহর এবং নিজের অগাধ টাকা নষ্ট হইয়াছে, তাহার উদ্ধারের সম্ভাবনা ছিল না। ইহার উপর রুষ্ট শিবাজী দেশে ফিরিয়া না জানি মুঘলদের উপর কি প্রতিহিংসা লন। এ সকলের উপর, নিজের বংশের আশা-ভরসা কুমার রামসিংহ বাদশাহর সন্দেহে পড়িয়া অপমানিত ও দণ্ডিত হইয়া আছেন। জয়সিংহের প্রথমবারকার এত যুদ্ধজয়, সরকারী কাজে নিজ লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়, দীর্ঘজীবন ধরিয়া রাজসেবায় রক্তপাত,—সবই বিফল হইল। তাঁহার দাক্ষিণাত্য-শাসন, চারিদিকে পরাজয় ও লজ্জায় পরিসমাপ্ত হইল। বাদশাহ তাঁহাকে ঐ পদ হইতে সরাইয়া ডাকিয়া পাঠাইলেন। শ্রম, ক্ষতি, চিন্তা ও অপমানে জর্জ্জরিত বৃদ্ধ রাজপুতবীর পথে বুর্হানপুর নগরে মরিয়া সকল যন্ত্রণার হাত হইতে মুক্তি পাইলেন (২রা জুলাই, ১৬৬৭)।

 বাদশাহ অবাধ্য পলাতক শিবাজীকে শাস্তি দিবার অবসর পাইলেন না। ১৬৬৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমেই পারস্যরাজের আক্রমণের ভয়ে একদল প্রবল মুঘল-সৈন্য পাঞ্জাবে পাঠান হইল, আর তাহার পর বৎসর মার্চ্চ মাসে পেশোয়ার প্রদেশে যে ইউসুফজাই-জাতির বিদ্রোহ বাধিল তাহাতে বাদশাহর সমস্ত শক্তি বহুদিন ধরিয়া সেখানে আবদ্ধ বহিল।

বাদশাহ ও শিবাজীর মধ্যে আবার সন্ধি হইল কেন?

 দেশে ফিরিয়া, শিবাজীও মুঘলদের সঙ্গে বিবাদ করিতে চাহিলেন না; তিন বৎসর পর্য্যন্ত শান্তভাবে রহিলেন, নিজরাজ্যের শাসনপ্রণালী গঠন এবং সুচারুরূপে জমির বন্দোবস্ত করিলেন; কোঁকন-প্রদেশে নিজ অধিকার বিস্তৃত করিতে লাগিলেন।

 এ অবস্থায় বাদশাহর সঙ্গে সন্ধি করায় তাঁহার লাভ। তিনি