পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজীর স্বাধীন রাজ্য স্থাপন
১২১

প্রাণত্যাগ করিলেন, এবং তাঁহার স্থানে চারি বৎসরের শিশু সিকন্দর রাজা হইলেন। তাঁহার অভিভাবক পদ লইয়া বিজাপুরের বড় বড় ওমরাদের মধ্যে মহা ঝগড়া বাধিয়া গেল। রাজ্যময় গোলমাল ও বিদ্রোহ দেখা দিল। বিজাপুরের নূতন উজীর খাওয়াস্ খাঁর সহিত শিবাজী আর পূর্ব্বের সদ্ভাব বজায় রাখিলেন না,ঐ রাজ্যে উৎপাত সুরু করিয়া দিলেন।

পনহালা-জয়

 ১৬৭৩, ৬ই মার্চ্চ, কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর রাত্রিতে শিবাজীর সেনাপতি কোণ্ডাজী ফর্জন্দ আটজন বাছা বাছা মাব্‌লে পদাতিক লইয়া নিঃশব্দে পনহালা-দুর্গের উপরে চড়িলেন। তাঁহার সৈন্যগণ হাত ধরাধরি করিয়া পরস্পরকে পাহাড়ের প্রায় খাড়া গা বাহিয়া টানিয়া তুলিল। চূড়ায় পৌঁছিয়া তাহারা চারিদলে ভাগ হইয়া চারিদিক হইতে ভেরী বাজাইয়া দুর্গের মধ্যে দুটিয়া চলিল। গভীর নিস্তব্ধ অন্ধকার রাত্রে, বাহিরের সমতলভূমি হইতে নহে, দুর্গের মধ্য হইতে এই হঠাৎ আক্রমণে দুর্গরক্ষকেরা হতভম্ব হইয়া পড়িল। চারিদিকে ছুটাছুটি ও পলায়ন আরম্ভ হইল। কোণ্ডাজী স্বয়ং দুর্গস্বামীকে তরবারি দিয়া কাটিয়া ফেলিলেন। হিসাবের প্রধান কর্ম্মচারী নাগোজী পণ্ডিত গোলমাল শুনিয়া রাস্তায় বাহির হইয়া একজন প্রহরীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে?” সে বলিল, “আরে ঠাকুর! জান না মারাঠারা দুর্গ লইয়াছে, আর দুর্গস্বামী মারা পড়িয়াছেন?” অমনি নাগোজী সর্ব্বস্ব ছাড়িয়া দ্রুতবেগে পলায়ন করিলেন। ধরা পড়িলে তাঁহাকে মারিয়া টাকাকড়ি আদায় করা হইত।

 তখন নীচ হইতে আর-সব মারাঠা সৈন্য দুর্গে ঢুকিল। ক্রমে প্রভাত হইল। সমস্ত দুর্গ শিবাজীর অধিকারে আসিল।[১] বিজাপুরী কর্ম্মচারীদের নিজের এবং সরকারী সব ধনসম্পত্তি কোথায় লুকান আছে প্রহারের


  1. জেবে শকাবলীতে লেখা আছে যে শিবাজী ঘুষ দিয়া (দুর্গের একদিককার