পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
শিবাজী

ওমরাদের মত দেখাইতেছিল। বাছা বাছা সিপাহীর পাগড়ীতে মোতির ঝালর ('তোড়া’), হাতে সোনার কড়া, গায়ে উজ্জ্বল বর্ম্ম ও জরির পোষাক।

 দুই রাজার মিলনের জন্য নির্দিষ্ট শুভদিনে সেই পঞ্চাশ হাজার মারাঠা-সৈন্য হায়দারবাদে ঢুকিল। তাহাদের বীরত্বের কাহিনী এতদিন দাক্ষিণাত্যে লোকমুখে প্রচাবিত, কত গাথায় (ব্যালাডে) গীত হইয়া আসিতেছিল। আজ লোকে অবাক হইয়া সেই-সব বিখ্যাত বীর নেতা ও সিপাহীদের দিকে তাকাইতে লাগিল; এতদিন তাহাদের নাম শুনিয়া আসিতেছিল, আজ তাহাদের চেহারা দেখিল।

 সকলের চোখে পড়িল সেনাপতি মন্ত্রী ও রক্ষীদের মধ্যস্থলে বীরশ্রেষ্ঠ শিবাজীর প্রতি। তাঁহার শরীর মাঝারি রকমের লম্বা এবং পাতলা। গত বৎসরের অসুখে এবং এই এক মাস ধরিয়া নিত্য কুচ করার ফলে তাহাকে আরও পাতলা দেখাইতেছিল। কিন্তু তাহার গৌরবর্ণ মুখে সদাই হাসি লাগিয়া আছে, তা উজ্জ্বল চোখ দুটি ও চোখাল নাক এদিকে ওদিকে ফিরিতেছে। নগরবাসীর আনন্দে “জয় শিব ছত্রপতির জয়” ধ্বনি করিতে লাগিল। মহিলারা বারান্দা হইতে সোনা-রূপার ফুল বৃষ্টি করিতে লাগিলেন, অথবা ছুটিয়া আসিয়া তাহার চারিদিকে প্রদীপ ঘুরাইয়া আরতি কারলেন, অভ্যর্থনার শ্লাক ও আশীৰ্বাদ-বাণী উচ্চারণ করিলেন। শিবাজীও দুই পাশের জনতার মধ্যে মোহর ও টাকা ছড়াইতে লাগিলেন, এবং প্রত্যেক পাড়ার প্রধান নাগরিকগণকে খেলা ও অলঙ্কার উপহার দিলেন।

শিবাজী ও কুতুব শাহর সাক্ষাৎ

 এইরূপে শোভাযাত্রা কুতুব শাহর বিচার-প্রাসাদ—দাদমহলের সামনে আসিয়া পৌঁছিল। সেখানে আর-সকলে শান্ত সংযতভাবে রাস্তায়