পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দক্ষিণ-বিজয়
১৪৭

কৃষ্ণা নদীর তীরে “নিবৃত্তি সঙ্গমে” (ভবনাশী নদীর সহিত মিলন ক্ষেত্রে) তীর্থস্নান ও পূজা স্নানাদি করিয়া, সৈন্যদের অনন্তপুরে পাঠাইয়া দিলেন, এবং নিজে অল্প রক্ষী ও কর্মচারী সঙ্গে লইয়া দ্রুতবেগে শ্রীশৈল দর্শনে চলিলেন।


শিবাজীর শ্রীশৈল দর্শন

 এই স্থান কর্মুল নগর হইতে ৭০ মাইল পূর্ব দিকে। এখানে কৃষ্ণা নদী হইতে হাজার ফুট উচু এক অধিতাকার জনহীন বনের মধ্যে মল্লিকার্জুন শিবের মন্দির—ইহা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের একটি লিঙ্গ। মন্দিরটি পঁচিশ ছাব্বিশ ফীট উচু দেওয়াল দিয়া ঘেরা; ইহার চারিদিকে অতি বিস্তৃত আঙ্গিনা। বড় বড় সমচতুষ্কোণ পাথর দিয়া এই দেওয়াল গাঁথা, আর তাহার গায়ে হাতী, ঘোড়া, বাঘ, শিকারী, যোদ্ধা, যোগী, এবং রামায়ণ ও পুরাণের দৃশ্য অতি সুন্দরভাবে খোদাই করা। শিবমন্দিরটিও সমচতুষ্কোণ। বিজয়নগরের দিগ্বিজয়ী সম্রাট কৃষ্ণদেব রায়ের অর্থে মন্দিরের চারিদিকের দেওয়াল ও ছাদ আগাগোড়া সোনার জল করা পিতলের চাদরে মোড়া (১৫১৩)। ঐ বংশের এক সম্রাজ্ঞী উপর হইতে নীচে কৃষ্ণার জলধারা পর্যন্ত হাজার ফীটেরও বেশী দীপথ, পাথরের শান বাঁধাইয়া দিয়াছিলেন। তাহার নীচে ঘাটের নাম “পাতাল গঙ্গা”; আর কিছু ভাটীতে “নীলগঙ্গা” নামে পার-ঘাট; এই দুটিই বিখ্যাত স্নানের তীর্থ। শিবমন্দিরের কাছে একটি হোট দুর্গা-মন্দির।

 শিবাজী শ্রীশৈলে উঠিয়া পূজা স্নান দান লক্ষ ব্রাহ্মণ ভোজন ইত্যাদি কার্য্যে এখানে নবরাত্রি (অর্থাৎ চৈত্র শুক্লপক্ষের প্রথম নয়দিবস, ২৪ মার্চ হইতে ১ এপ্রিল, ১৬৭৭) যাপন করিলেন। এই তীর্থস্থানের শান্ত স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্য, রম্য নির্জ্জনতা, এবং ধর্মভাব জাগাইবার স্বাভাবিক শক্তি