পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবনের শেষ দুই বৎসর
১৬৭

ঐ মাসের শেষে শিবাজী নিজে দশ হাজার সৈন্য লইয়া বিজাপুরের প্রায় পঞ্চাশ মাইল পশ্চিমে সেলগুড নামক স্থানে পৌঁছিলেন। পূর্বে তাহার যে দশ হাজার অশ্বারোহী বিজাপুরের কাছে আসিয়াছিল, তাহারা এখানে তাঁহার সঙ্গে মিলিত হইল। সেলগুড হইতে শিবাজী নিজে আট হাজার সওয়ার লইয়া সোজা উত্তর দিকে, এবং তার দ্বিতীয় সেনাপতি আনন্দ রাও দশ হাজার অশ্বারোহী লইয়া উত্তর-পূর্ব দিকে মুঘল-রাজ্য লুঠ ও ভস্ম করিয়া দিবার জন্য ছুটিলেন। তিনি ভাবলেন যে দিলিব নিজ প্রদেশ রক্ষা করিবার জন্য শীঘ্রই বিজাপুররাজ্য ছাডিয়া ভীমা পার হইয়া উত্তরে ফিরিবেন। কিন্তু দিলিব বিজাপুরী রাজধানী ও রাজাকে দখল করিবার লোভে নিজ প্রভুর রাজ্যের দুর্দশাব দিকে তাকাইলেন না।

দিলিবের নিষ্ঠুরতা, শম্ভুজীর পনহলায় ফিরিয়া আসা

 বিজাপুরের মত প্রবল এবং বৃহৎ দুর্গ জয় করা দিলিরের কাজ নহে; স্বয়ং জয়সিংহও এখানে বিফল হইয়াছিলেন। একমাস সময় নষ্ট করিয়া ১৪ই নবেম্বর দিলির বিজাপুর শহর হইতে সরিয়া গিয়া তাহার পশ্চিমের ধনশালী নগর ও গ্রামগুলি লুঠিতে আরম্ভ করিলেন। এই অঞ্চল যে মুঘলেরা আক্রমণ করিবে তাহা কেহই ভাবে নাই, কারণ মুঘলদিগের পশ্চাতে রাজধানী তখন অপরাজিত ছিল। সুতরাং এই দিক হইতে লোকে পলায় নাই, স্ত্রী পুত্র ধন নিরাপদ স্থানে সরায় নাই। এই অপ্রস্তুত অবস্থায় শক্রর হাতে পড়িয়া তাহাদের কঠোর দুর্দশা হইল। “হিন্দু ও মুসলমান স্ত্রীলোকগণ সন্তান বুকে ধরিয়া বাড়ীর কুয়ায় ঝাঁপাইয়া পড়িয়া সতীত্ব রক্ষা করিল। গ্রামকে গ্রাম লুঠে উজাড় হইল। একটি বড় গ্রামে তিন হাজার হিন্দু মুসলমান (অনেকে নিকটবর্তী ছোট গ্রামগুলিয় পলাতক আশ্রয়প্রার্থী)-দের দাসরূপে বিক্রয় করিয়া দেওয়া হইল।”

 এই মত অনেক স্থান ধ্বংস করিয়া, দিলির বিজাপুরের ৪৩ মাইল