পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবনের শেষ দুই বৎসর
১৬৯

অভিসম্পাত করিলেন। ইহার পাঁচমাস পবে শিবাজীর অকালমৃত্যু হইল; সকলেই বলিল যে পীরের ক্রোধের ফলেই এরূপ ঘটিয়াছে।

 মারাঠা-সৈন্য চারিদিন ধরিয়া জালনা নগর এবং তাহার শহরতলীর গ্রাম ও বাগান লুঠ করিয়া দেশের দিকে—অর্থাৎ পশ্চিমে, ফিরিল। সঙ্গে অগণিত লুঠের টাকা, মণি, অলঙ্কার, বস্ত্র হাতী, ঘোড়া ও উট, সেজন্য তাহারা ধীরে ধীরে চলিতে লাগিল। রণমস্ত খাঁ নামে একজন চটপটে সাহসী মুঘল-ফৌজদার এই সময় মারাঠা-সৈন্যদের পশ্চাতে। আসিয়া আক্রমণ করিলেন। শিখোজী নিম্বলকর পাঁচ হাজার সৈন্য লইয়া তাঁহার দিকে ফিরিয়া বাধা দিল; তিন দিন ধরিয়া যুদ্ধ হইল, শিখোজী ও তাঁহার দুই হাজার সৈন্য মারা পড়িল। আর, ইতিমধ্যে মুঘল-দাক্ষিণাত্যের রাজধানী আওরঙ্গাবাদ হইতে অনেক সৈন্য রণমস্ত খাঁর দলপুষ্টি করিবার জন্য আসিতেছিল। তৃতীয় দিন তাহারা যুদ্ধক্ষেত্র হইতে ছয় মাইল দূরে পৌছিয়া রাত্রির জন্য থামল। শিবাজী চারিদিকে ঘেরা হইয়াল ধরা পডেন আর কি। কিন্তু ঐ নূতন সৈন্যগণের সর্দ্দার কেশরী সিংহ গোপনে সেই রাত্রে শিবাজীকে পরামর্শ দিয়া পাঠাইল যে সামনের পথ বন্ধ হইবার আগেই তিনি যেন সর্বস্ব ত্যাগ করিয়া তৎক্ষণাৎ দেশে পলাইয়া যান। অবস্থা প্রকৃতই খুব সঙ্কটাপন্ন দেখি, শিবাজী লুঠের মাল, নিজের দু-হাজার ঘোড় ইত্যাদি সব সেখানে ফেলিয়া মাত্র পাঁচশত বাছাবাছা ঘোড়সওয়ার সঙ্গে লইয়া স্বদেশের দিকে রওনা হইলেন। তাঁহার সুদক্ষ প্রধান চর বহিরজী একটি অজানা পথ দেখাইয়া দিয়া তিন দিন তিন রাত্রি ধরিয়া তাহাকে অবিরাম কুচ করাইয়া নিরাপদ স্থানে আনিয়া পৌছাইয়া দিল। শিবাজীর প্রাণ রক্ষা হইল; কিন্তু, এই যুদ্ধে ও পলায়নে তাঁহার চারি