পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
শি বা জী

করিবার পর তাহার নীচে সমুদ্রের খাড়ীতে (বম্বে হইতে ২৪ মাইল পূর্বে) শিবাজী প্রথম জাহাজ নির্মাণ করিয়া তাহা সমুদ্রে ভাসাইলেন। এই নবশক্তির জাগরণে পোর্তুগীজদের ভয় ও হিংসা হইল। পরে কোঁকন তীর দিয়া তাহার দ্রুত রাজ্য-বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ নির্মাণ, নৌ-সেনা ভর্তি এবং কুলে জাহাজের আশ্রয়স্থল-স্বরূপ জলদুর্গ ও বন্দর স্থাপন বাড়িয়া চলিল; “রাজা সমুদ্রের পিঠে জীন চড়াইলেন” (সভাসদ)।

 শিবাজীর সর্ব্বসমেত চারিশত নৌকা ছিল। তাহা ছোট-বড় সকল শ্রেণীর, যথা ঘুরাব(তোপ-চড়ান, সমান ও উঁচু পাটাতনের যুদ্ধ-জাহাজ), গলবট(দ্রুতগামী পাতলা রণতরী), তরাণ্ডী, তারবে, শিবাভ এবং মাঁচোয়া (এ দুটি মালবাহী নৌকা), পগার ইত্যাদি। তাঁহার অধিকাংশ জাহাজই অতি হোট, ভারী ধাতুর পাতে মোড়া নহে, এবং তীর ছাড়িয়া বহুদূরে সমুদ্রে দীর্ঘকাল থাকিতে অক্ষম; কামানের এক গোলা লাগিলেই ডুবিয়া যাইত। ইংরাজকুঠীর অধ্যক্ষ এগুলির সম্বন্ধে বলিয়াছেন,—“এই সকল নৌকা অসার জিনিষ, ইংরাজদের একখানা ভাল যুদ্ধ-জাহাজ ইহাদের একশতখানা নির্বিঘ্নে ডুবাইয়া দিতে পারে।” অর্থাৎ যাহাকে “মশা মাছি” (mosquito craft) বলা হয়। সুরত বধে ও গোয়া ছাড়া পশ্চিম-কুলের প্রায় আর-সব বন্দরের জলের গভীরতা এত কম যে বড় বড় ভারী জাহাজ সেখানে ঢুকতে বা ঝড়ের সময় আশ্রয় লইতে পারে না। এজন্য প্রাচীনকাল হইতেই কোঁকন ও মালবারকুলের পণ্য-দ্রব্য ছোট এবং কম গভীর (চেপ্টা তলা) নৌকায় চালান করা হইত; এসব নৌকা তীরের কাছে যেখানে ছোট খাড়ী ও নদীতে তুফান দেখিলেই পলাইয়া রক্ষা পাইত। এই দেশের যুদ্ধ-জাহাজও সেই ধরণে তৈয়ার করা হইত; এগুলি হোট, বড় বড় বা বেশী সংখ্যার