পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজীর নৌবল,ইংরাজ ও সিদ্দিদের সহিত সংঘর্ষ
১৮১

তোপ বহিতে পারিত না; ঝড়ে সমুদ্রে টিকিতে বা ডাঙ্গা ছাড়িয়া দূরে গিয়া একসঙ্গে অনেকদিন ধরিয়া পালে চলিবার জন্য প্রস্তুত নহে। তাহারা সংখ্যার জোরে যুদ্ধজয়ের চেষ্টা করিত, তোপের গোলাতে নহে। শিবাজীও নিজ পোতগুলি এই প্রাচীন ধরণের গঠন করেন, এবং জলযুদ্ধে এই পুরাতন রণ-নীতির কোন পরিবর্তন বা উন্নতি করেন নাই। কাজেই, ইরাজদের ত কথাই নাই, সিদ্দিদের কাছেও তাঁহার সহজেই পরাজয় হইত।

শিবাজীব নাবিক ও নৌ সনাপতি

 শিবাজীর নো-বল দুই ভাগ করিয়া রাখা হয়;দরিয়া সারঙ্গ (মুসলমান) এবং ময়া-নায়ক হিন্দু) উপাধিধারা দুজন নৌ-সেনাপতি (অ্যাডমিরাল) ইহাদের নেতা। রত্নগিরি জেলার সমুদ্র-কুলের গ্রামগুলিতে জেলে ভণ্ডারী জাতের অনেক কৃষক আছে। ইহারা সমুদ্রে বাস করিতে,জাহাজ চালাইতে এবং নৌ-মুদ্ধে পুরুষানুক্রমে অভ্যস্ত। আগে ইহারা জলদস্যুগিরি করিত। ইহাদের দেহ পুষ্ট, সবল ও ব্যায়ামে গঠিত-স্থল-যুদ্ধে যেমন মারাঠা ও কুনবী জাত দক্ষ, ইহারাও ঠিক সেইমত। এই ভণ্ডারী এবং অপর কয়েকটি নাচ হিন্দুজাত—যথা,কোলী,সংঘর, বাঘের ও আংগ্রে (বংশ) হইতে শিবাজী অনেক উৎকৃষ্ট নৌ-সেনা ও নাবিক পাইলেন।

 পরে (১৬৭৭ সালে) ঘরোয়া বিবাদের ফলে সিদ্দি সম্বল এবং তাহার ভ্রাতুস্পুত্র সিদ্ধি মিসরি, এই দুই হাবশী সর্দার আসিয়া শিবাজীর অধীনে কাজ লইলেন। তাঁহার অপর মুসলমান নৌ-সেনাপতির নাম দৌলত খাঁ কিন্তু জঞ্জিরার সিদ্দিদের জাহাজগুলি মারাঠাদের তুলনায় আকারে বড়, অধিকতর দৃঢ় ও সুরক্ষিত, এবং ভাল কামান এবং দক্ষতর যোঙ্কা দিয়া পূর্ণ; সুতরাং যুদ্ধে সিদ্দিরই জয়লাভ হইত, মারাঠারা অনেক বেশী লোক ও নৌকা হারাইয়া পলাইত।